মান্দার গাছের ডাল!

জহিরুল চৌধুরী
Published : 20 April 2015, 05:52 AM
Updated : 20 April 2015, 05:52 AM


ঘটনা কী বুঝলেন? লিটনরা হামলাকারীদের ধরে পুলিশের হাতে দিচ্ছে, আর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিচ্ছে! পুলিশের মতে- এসব মামুলি কাপড় ধরে টানাহ্যাঁচড়া, কিল-ঘুসি-থাপ্পড়, এ আর এমন কী? জামাত-শিবির-হেফাজত-আনসার-বানসার এসবের মানে কী, এরা কোথায় কিভাবে কাজ করে, কি করলে নারী নির্যাতন হয়- এসব ব্যাপারে আপনি পুলিশকে ট্রেনিং দেবেন, না নিজের হাতেই এসব উপদ্রব তাড়ানোর উদ্যোগ নেবেন?

বছর দুয়েক আগে পুলিশকে রাস্তায়-রাস্তায় জামাত-শিবির যখন রক্তাক্ত-জখম করছিল, ধারণা করেছিলাম পুলিশের একটা বাস্তব জ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। তাদের আর শেখাতে-পড়াতে হবে না জঙ্গীদের ব্যাপারে! কাকস্য পরিবেদনা! দুর্নীতিতে আকন্ঠ গা ভাসাতে-ভাসাতে, অথবা জীবনে না পাওয়ার বেদনা তাদের এতটাই কাতর করে ফেলেছে যে, কোনো কিছুই আর তাদের গায়ে আঁচড় কাটে না! পাশে কেউ মারা গেলে দরিদ্র চা'ওলা দৌড়ে আসে, রিক্সাওয়ালা বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে-হলে পৌঁছে দেয়। মাগার পুলিশ, কে যেন তাদের পা আড়স্ট করে বেঁধে দেয় মাটির সাথে! ব্রিটিশ তাদের শিখিয়েছে- "হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না!" হুকুমের জন্য বসে থাকে। আর হুকুম ওয়ালা বসে থাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে, নয়ত কোনো জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর গুণ-কীর্তনে!

যুক্তরাষ্ট্রে দেখেছি মেইলম্যানদের মেইলব্যাগে এক ধরনের স্প্রে থাকে। এর নাম "Animal Deterrent Spray"। আমার এক বন্ধু মেইল ম্যানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এর মাজেজা। জানালো- মানুষের বাসাবাড়িতে পোষা কুকুর থাকে। কোনো কোনো কুকুর এমনই জঙ্গী হয় যে, মেলম্যানদের কামড়াতে উদ্যত হয়। তখন পাগলা কুকুরের চোখে-মুখে ওই স্প্রে ছিটিয়ে দিলে মুহূর্তে কাত হয়ে, আধা ঘণ্টা পরিমান সময় নির্জীব পড়ে থাকে! ততক্ষণে মেইল ডেলিভারি করে নিরাপদে সটকে পড়া যায়। দেশে আমার ভাবী-বোন-ভাতিজী-ভাগনী অগণিত স্বজন। দেশের উপকারে কিছুই করতে পারিনি, তাদের জন্য এতটুকু পরামর্শ- স্প্রে টি আপনারা সঙ্গে রাখতে পারেন। দাম পাচ'শ টাকার বেশি হবে না। যাদের সামর্থ নেই তারা সম্মিলিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন জানান। তিনি যখন পুলিশ দিয়ে উপকার করতে পারছেন না, সে কারনে অন্তত বিনামূল্যে এটি সরবরাহ করুন!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৬ সালের ২৬ নভেম্বর শিবির "ইসলামী বিপ্লব করেছিল"। ওই দিনটিকে বিশেষভাবে মনে রাখার কারন- এদিন শিবির হামিদের হাত কেটেছিল, আরো ডজনখানেককে জখম করেছিল, হামিদের কাট হাত লাঠির আগায় ঝুলিয়ে গগনবিদারী ধ্বনি তুলেছিল- "আল্লাহু আকবর"। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজাকার সাঈদী সাহেব এসে শিবির কর্মীদের গাজী উপাধী দিয়ে এই বিপ্লব সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল নৃত্যগীত, নাটক, কবিতা, রবীন্দ্র-নজরুল।

আমার মত অসংখ্য গোবেচারা ছাত্রের জন্য পরিবেশটি ছিল অসহনীয়। আমরা প্রমাদ গুনেছিলাম। বলেছিলাম- বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান আট হাজার ছাত্রই হবে তোদের সাধের ইসলামী বিপ্লবের জন্য 'কাল'। এরা তোদের নির্যাতনের নাগপাশ ছেড়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবে কর্মযজ্ঞে, কোনদিন ওরা তোদের আর সমর্থন করবে না। একমতে তোরা ভালই করেছিস বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সুবিধাবাদী জায়গায় বিপ্লব করে। কারন এখানে ছাত্রশিক্ষক সবাইকে কেনা যায় পয়সা দিয়ে, চাকরির লোভ দেখিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের খেটে খাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের তোরা কিনবি কোন মূল্যে?

সেদিনের ঘটনার প্রায় তিরিশ বছর অতিক্রান্ত। দেখছি দেশে-বিদেশে চবি'র ছাত্র যে যেখানে আছে, সবাই উচ্চকন্ঠ সেইসব জামাত-শিবির-হাফাজত-আনসার ইত্যাদির অসভ্য এবং বর্বরতার বিরুদ্ধে। প্রতিরোধ হবে সাধারণের মধ্য থেকে, এর নেতৃত্ব দেবে গোটা কয়েক সাহসী লিটন। সব ছাত্র কোনদিন আসবে না। এরা বড়জোর ঘটনার দর্শক হবে। প্রতিরোধের কিছু অস্ত্রের নমুনা দিলাম। এগুলো না পাওয়া গেলে আর কী করবেন- মান্দার গাছের ডাল! সে কারনে ঢাকার ফুটপাথে বেশি করে মান্দার গাছের ডাল রোপন করুন! বাংলাদেশের জলবায়ু মান্দার গাছের জন্য খবই উপযুক্ত!

নিউইয়র্ক, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

কয়েকটি এনিমেল ডেটারেন্ট স্প্রে'র ব্রেণ্ড