শেখ হাসিনার বিদেশনীতি

জহিরুল চৌধুরী
Published : 6 May 2015, 06:30 PM
Updated : 6 May 2015, 06:30 PM

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সাফল্য নিয়ে যত বেশী আলোচনা হয়, কূটনীতি নিয়ে তেমনটা হয় না। এর কারণও আছে। আসল কারন হলো- প্রধান বিরোধী দলকে রাজনীতির প্যাঁচে ফেলে শেখ হাসিনার সরকার বেশ আছে! কিন্তু কিংবদন্তির এই সাফল্যে আত্মহারা হয়ে তো একাকী থাকা যায় না! বহির্বিশ্ব বলতে কেবল ভারত নয়। কিংবা নিমরামুখী চীনও নয়! ইউরোপ-আমেরিকার মন জুগিয়ে চলাও বিদেশ নীতির অংশ। সে কারনে সময় এসেছে- শেখ হাসিনার সরকারকে বিদেশ নীতিতে মনযোগী হওয়ার।

বাংলাদেশের প্রধান রফতানীর বাজার মূলত ইউরোপ-আমেরিকা। ভারত কিংবা চীন নয়। বরং দেশ দু'টি তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এটা ভাবার কোনো কারন নেই যে চীনের অর্থনৈতিক শক্তির কাছে ইউরোপ-আমেরিকা ধরাশায়ী হয়ে গেছে। বরং চীন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হলেও সর্বদলীয় গণতন্ত্রহীনতার কারনে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সবসময় চাপে।

পদ্মাসেতু থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মন কষাকষির শুরু। এসময় বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ায় চীন, কথাটি সত্যি। শুধু তাই নয়- রাশিয়া এবং চীন অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশের বড় অর্থনৈতিক অংশীদার। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নিজের পছন্দমত ঋণ গ্রহনের এই সুযোগ বাংলাদেশের জন্য সত্যি আশীর্বাদের। আমাদের পাশের মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যাণ্ড এবং পাকিস্তান তো বটেই, চীনের কাছ থেকে বিপুলভাবে উপকৃত হয়েছে। কিন্তু এ দেশগুলো চীনের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে উপকৃত হলেও পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরায়নি।

তাহলে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এতোটা উদাসীন কেন? কারনটা কি এই যে, ভারত চায় না বাংলাদেশ সরাসরি পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কে গা ভাসাক? অথচ ভারতের প্রধান মন্ত্রী মোদী তো ঠিকই নিজের দেশে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি লাভের আশায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিতে ধর্ণা দিয়ে চলেছেন! ভারতকে আমরা সৎ প্রতিবেশী হিসেবে চাই, সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে যে ভারত নিপাট বন্ধু হতে পারে না, তা আওয়ামী লীগের চেয়ে আর কে ভাল বলতে পারে, বিশেষত ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপটে?

যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সরকার প্রতিষ্ঠিত। এর ফরেন সেক্রেটারী জন কেরী একজন বুদ্ধিমান এবং সমঝোতা প্রবণ মানুষ। লক্ষ্য করুন- যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম একজন ফরেন সেক্রেটারী সোমালিয়ার মতো অভ্যন্তরীণ কলহে লিপ্ত একটি দেশ সফর করছেন। আল-শাবাবের সন্ত্রাস এবং সমুদ্রোপকূলে জল দস্যুতার মত ঘটনায় দেশটির সরকার অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির জন্য রাজনৈতিক সহযোগিতার বার্তা নিয়ে গেছে।

ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের নিকট অতীত- ২০০৬-০৭ সালের বিবদমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার সরকার আজ গদীনশীন। শুধু তাই নয় এই গদিকে (মহাজনের গদ্দি নয়তো?) তিনি ছলে-বলে দীর্ঘায়িত করেই চলেছেন! অথচ পশ্চিমের দাবি অত্যন্ত ছোট্ট। তা হলো- শেখ হাসিনা যেন আলাপ-আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি করেন, যাতে বিরোধী পক্ষ দেশে শান্তিতে-সস্থিতে জীবন-যাপনের উপলক্ষ খুঁজে পায়। কারন বিরোধী পক্ষ অসস্থিতে থাকলে যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও এর প্রভাব পড়ে?

নিউইয়র্ক, ৫ মে ২০১৫