আলোর দিশারি

জহিরুল চৌধুরী
Published : 15 May 2015, 04:53 AM
Updated : 15 May 2015, 04:53 AM

আজ বাংলার নবজাগরণের কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমানের প্রয়াণ দিবস। ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস লেখার জন্য ১৯৬২ সালে তিনি যখন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পান, তখন পাকিস্তানের ক্ষমতায় আইয়ুব খান। অথচ উপন্যাসটি পুরাই আইয়ুব খানকে ব্যাঙ্গ করে লেখা। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের পরাক্রমশালী এই সামরিক শাসকের আমলেই তিনি পেয়েছিলেন আদমজি সাহিত্য পুরষ্কার, এমনকি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। শওকত ওসমান ছিলেন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনার মানুষ। তথাপি পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসক চক্রের রক্তচক্ষু ম্লান করতে পারেনি তার সাহিত্য প্রতিভা। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু আমরা কি কল্পনা করতে পারি সরকারের বিরাগ ভাজন কেউ বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পাবেন?

শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান আমাদের বরেণ্য কবি সাহিত্যিকরা কেবল বুদ্ধিবৃত্তির মানুষগুলোকেই একত্রিত করেননি, জাতিকেও ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তরুন-যুব সমাজকে দিয়েছিলেন আশার আলো। আজ উদভ্রান্ত তরুন সমাজ, পথ হারা জাতি। চাই'রা বেঁচে যায়, চুনোপুঁটি মরে সাম্প্রদায়িকতা আর ভ্রষ্ট রাজনীতির চাপাতির ঘায়ে। সর্বগ্রাসী রাজনীতি কেড়ে নিয়েছে সাহিত্য-শিল্প চর্চার পরিবেশ। যারা বিশ্বাস করেন সত্য ও ন্যায়ে, সমাজে তারা মূল্যহীন। যে যত বেশী হিংস্র, রাজনীতি ও সমাজে তার মূল্য তত বেশী!

কি ছিল শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসে? ভোরবেলা খলিফা হারুনর রশীদ বের হতেন প্রজাদের দুঃখ দুর্দশা দেখতে। একদিন ক্রীতদাসপল্লী অতিক্রমের সময় শুনতে পান এক ক্রীতদাস, নাম তাতারি আর তার স্ত্রী মনের সুখে হাসছে। চরম দারিদ্রে বসবাস করলেও তাদের এই হাঁসি আর থামেনা। খলিফা বন্দী করে নিয়ে আসেন ক্রীতদাস-দাসীকে। অতঃপর দাসীকে তিনি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বিয়ে করেন, আর তাতারিকে পাঠান কয়েদ খানায়। কয়েদ খানায় তাকে নানা উপাদেয় খাদ্য দেন, দেন মর্যাদা, তবু তাতারি'র মুখে হাঁসি ফোটে না। এদিকে স্ত্রীর মর্যাদা পেলেও ক্রীতদাসীর মুখ থেকে হারিয়ে যায় হাঁসি চিরতরে। খলিফা বুঝতে পারেন- স্বাধীনতার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। একমাত্র স্বাধীনতাই পারে মানুষের মুখে হাঁসি ফোঁটাতে।

আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত করতেন দেশের প্রেসিডেন্টকে। শওকত ওসমান স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন। তার ক্ষুরধার লেখনি সচল ছিল এরশাদ স্বৈর শাহীর পুরো সময়। সব্যসাচী লেখক শওকত ওসমান এখনও আমাদের চেতনার অগ্নিমশাল। বাঙালির আলোর দিশারি।

নিউইয়র্ক, ১৪ই মে ২০১৫