নরম হাতের ছোঁয়া

জহিরুল চৌধুরী
Published : 8 June 2015, 07:41 PM
Updated : 8 June 2015, 07:41 PM

ছবিঃ ফেলানীর করুন পরিণতি, লঙ্কামুরা বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ-এর প্রহরা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফ এর পাহারা, শেষ ছবিটি মরোক্কো-স্পেইন সীমান্তে বেড়ার উপর থেকে আফ্রিকানদের টেনে নামাচ্ছে স্পেইনের পুলিশ।

দু'টো নরম হাতের ছোঁয়া নিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাত মেলাতে অনেকটা বাধ্য। কিন্তু এই হাতের ছোঁয়া পেতে আজন্ম ভারত বিদ্বেষী বিএনপি নেত্রী কতোটা মরীয়া তাই দেখলাম টিভি সংবাদ চিত্রে। কিন্তু আশ্চর্য হলাম এরা দু'জনের কেউই একটি বারের জন্য কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না! এমনকি আমাদের মিডিয়াও নয়! এই কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করতে যেয়েই ফেলানী হয়েছিল রক্তাক্ত। তার রক্তাক্ত দেহ ঝুলেছিল বেড়ায়, রক্তাক্ত হাত ধরেছিল কাঁটাতারের বেড়া! এবং তা দেখেছিল সমগ্র বিশ্ববাসী। ফেলানীর হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিল হাত মেহেদীর রঙে রাঙ্গানোর স্বপ্ন। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সে জন্যেই পাড়ি দিতে চেয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া কিংবা দেয়াল তুলে, এবং এই বেড়া নদ-নদী পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা দিয়ে ভারত-বাংলা মনের বন্ধন আদৌ সম্ভব হবে কি-না তা ভবিষ্যতই বলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিকরা যে এতোটা দেউলিয়া চরিত্র ধারন করেছেন, তা দেখে বিস্ময় জাগে!

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া কিংবা দেয়াল তোলার প্রচলন হয়েছিল ইউরোপে। বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গেছে আড়াই দশক আগে। কিন্তু সীমান্ত সীল-গালা করে দেয়ার নীতি এখনও একবিশ্বের ধারণাকে ক্রমেই অসম্ভব করে তুলছে। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট বলছে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত দেয়াল ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ছিল ১৬টি, আর ১৯৯০-এ বার্লিন প্রাচীর ভাঙ্গার পর থেকে এ যাবত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০টি। তার মানে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে মানুষে মানুষে মেল বন্ধনের বিপরীতে বৈষম্য বেড়েছে। এই মেল বন্ধনের জন্য দশটি বড় প্রাচীরকে অন্তরায় হিসেবে দেখানো হয়েছে, তালিকার আট নম্বরে আছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। বার্লিন প্রাচীর ভাঙ্গার ২৫তম বার্ষিকীতে গত বছরের শেষ ভাগে অন্তত এক লক্ষ মানুষের সমাবেশে বিশ্বব্যাপী বেড়া ভাঙ্গার শ্লোগান ওঠে।

দেখা যাক বিশ্বের কোথায় কোথায় এখনও অসভ্যের মত আমরা সীমান্ত প্রাচীর তুলে রেখেছি। তালিকাটা এরকম- ১) ভারত-পাকিস্তান, ২) জর্জিয়া-দক্ষিণ ওসেথিয়া, ৩) গাজা-ইসরাইল, ৪) মিসর-গাজা, ৫) ইসরাইল-পশ্চিম তীর, ৬) যুক্তরাস্ট্র-মেক্সিকো, ৭) উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়া, ৮) ভারত-বাংলাদেশ, ৯) বুলগেরিয়া-তুরস্ক, ১০) স্পেইন-মরক্কো সীমান্ত। এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে- একমাত্র ভারত এবং ইসরাইল তার প্রতিবেশী কাউকেই বিশ্বাস করে না!

একদিকে কাঁটাতারের বেড়া তুলে বাংলাদেশকে অস্পৃশ্য করে রাখার উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার, আর অন্যদিকে "বিশ্ব দেখুক আমরা একসঙ্গে চলতে জানি" এসবই মোদীর রাজনৈতিক চালবাজী। মোদীর শক্ত হাত আমাদের দু'টো নরম হাত ছুঁয়ে বাংলাদেশকে আসলে কী দিয়ে গেল? অর্থ? বিনা শর্তে অর্থ এবং প্রযুক্তি দেয়ার জন্য তো চায়না এক পায়ে খাড়া! আমাদের শর্তযুক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই। বরং এক্ষুনি তুলে ফেলেন কাঁটাতারের বেড়া। আমরা ফিরে যেতে চাই ১৯৪৭-এর ভারত ভাঙ্গার আগের মেল বন্ধনে! বৈষম্য সৃষ্টির বেড়া আমরা চাই না!

নিউইয়র্ক, ৮ই জুন ২০১৫