আমাকে দণ্ড দাও…

জহিরুল চৌধুরী
Published : 21 Sept 2020, 02:49 AM
Updated : 25 July 2011, 06:52 PM

আমাকে দণ্ড দাও, কারন আমি আইনের শাসন চাই। আমাকে দণ্ড দাও, কারন আমি বাংলাদেশকে বাসযোগ্য দেখতে চাই। আমাকে দণ্ড দাও, কারন আমি কপট রাজনীতির খপ্পর থেকে বাংলাদেশের মুক্তি কামনা করি। আমি জানি- আমাকে কেউ দণ্ড দেবে না।

আমি রাজাকার-আলবদরের মৃত্যুদণ্ড চাই, তাই বলে হত্যাকারীর মুক্তি চাই না। হত্যাকারী, আইনকে যে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে- আমি তার উপযুক্ত বিচার দাবি করি। যারা তাকে ক্ষমা করে, আমি তাদেরও বিচার দাবি করি। আমি দেশের নাগরিক। আমার এবং প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্যেই আমি আইনের যথাযথ প্রয়োগ দাবি করি। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই' এ কথাগুলো বলার জন্যেই আমি আইনের অস্তিত্বকে স্বীকার করি। সভ্য সমাজের জন্যই আইন। গহীন অরণ্য কিংবা পাতালে, আমি আইনের প্রয়োগ চাই সর্বত্র। যাতে মানুষের সভ্যতা এগিয়ে চলে। যাতে মানুষ নির্ভয়ে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে বিচরণ করতে পারে। মেধা ও বুদ্ধির প্রয়োগে পৃথিবীটাকে আরো বাসযোগ্য করতে পারে।

মানব সমাজের জন্য আইনের শাসন যে কতোটা জরুরি, তার অগ্নি উদাহরণ ঈস্টার আইল্যান্ড'।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপটি ক্যানিবল রাজ্যে নিজেকে সমর্পণ করেছিল কেবল আইনের শাসন ছিল না বলে। মানুষ নির্বিচারে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছিল কেবল এই একটি কারন-
আইনের শাসন ছিল না বলে। অপরাধীকে ক্ষমা করলে আইনের শাসন হোঁচট খায়, আমাদের রাজনীতিবিদেরা কী তা জানেন না?

বাংলাদেশের সামাজিক অস্থিতিশীলতা আর রাজনীতিবিদদের কূপমণ্ডুকতা দেখলে আমার ইদানিং কেবল ঈস্টার আইল্যাণ্ডের কথা মনে হয়। একটি সমাজের বিপর্যয়ের জন্য কয়েকজন কপট রাজনীতিকই যথেষ্ট। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঈস্টার আইল্যাণ্ডে কয়েক'শ বছর আগে। রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ব্যাপক ভূমি ধ্বসে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মানু্ষ-মানুষকে হত্যা করে হাড় মাংস খেয়ে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে। ১৭২২ সালে ইউরোপীয়দের আগমনের সময় জনসংখ্যা নেমে দাঁড়ায় দুই থেকে তিন হাজারে। অথচ শতাব্দি আগেও এখানে জনসংখ্যা ছিল ন্যূনতম ১৫ হাজার।

মাত্র ৭৭ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি তার অধিবাসীদের চাহিদা মেটাতে পারছিল না। প্রায় মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থানের কারনে আশেপাশের কেউ জানার আগেই একটি মানব সভ্যতা বিলীন হয়ে যায় মহাকালের গর্ভে। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য তারা বড় বড় গাছ খোদাই করে দেবতার পুজা শুরু করে। এই দেবতা তৈরির জন্যে বৃক্ষ নিধন যে তাদের পরিবেশের এতটা ক্ষতির কারণ হবে, সেটাও তারা আন্দাজ করতে পারেনি। আজ সেখানে কেবল মূর্তিগুলো দাঁড়িয়ে, নেই কোন জনমানব। একদিন হয়তো বাংলাদেশে হাসিনা, খালেদা, এরশাদ, অথবা গোলাম আজমদের কেবল ছবি শোভা পাবে। থাকবে না কোন অনুসারী। আর মানুষ ঘৃণা ভরে স্মরণ করবে তাদের অপ রাজনীতির কথা। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের জন্য আর কত ঈস্টার আইল্যাণ্ডের উদাহরণ প্রয়োজন তা আমার জানা নেই।

***
নিউইয়র্ক, ২৫ জুলাই ২০১১