আমি বলি, মানুষের মাথাটা যদি কখনো বিটরে করে তাহলে হিমালয়-আল্পসের ধ্বসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষত মানুষের মাথা আর হৃদয় যখন এক মোহনায় না মেলে, তখনই তাল-গোল পাকানোর মতো ঘটনাবলি ঘটতে থাকে! সংসারে অশান্তি, স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য, নিকটজনদের কাছে অবিশ্বাসের পাত্র হওয়া- ইত্যাদি।
এক সময় বামপন্থীদের মানুষ বিশ্বাস করতো। আমার ধারণা এখনো করে। সাম্যবাদে বিশ্বাসীরা এমনকি সংসার বিরাগী হয়। যাতে সংসারের চার দেয়ালে তারা বন্দি হয়ে আত্মসার্থ মগ্ন না হন। উদ্দেশ্য- পারিবারিক ঝুট ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে তারা মানুষের খেদমতে যেন সারাটি জীবন নিজেদের নিবেদিত রাখতে পারেন। বাংলাদেশের দারিদ্র কবলিত জনপদের অবহেলিত মানুষ এঁদের দেবতূল্য মনে করতো। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পারিবারিকভাবে সেই বলয় থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। তার বাবাও ছিলেন একজন নিবেদিত রাজনীতিবিদ। আমিও নির্দ্বিধায় বলতে পারি- সুরঞ্জিত সেনের এই ধরাশায়ী পরিণতিতে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক মতলববাজ লোকগুলো। এরা এঁদের লুটপাটকে জায়েজ করার আরেকটি সুযোগ পেল। আর দল হিসেবে খুব খুশি হবে জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আজ যারা কাঠগড়ায়- তারা নিঃসন্দেহে এই উছিলায় খড়-কুটো ধরার চেস্টা করবে।
এ মুহুর্তে আরেকটি মানুষের জন্য খানিকটা বেদনা অনুভব করি- তিনি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যাদের ক্ষমা করে দিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছিলেন, শেখ হাসিনা তাদের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জামাতে ইসলামী নামক হিংস্র দানবদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, আওয়ামী লীগকে কলঙ্ক মুক্ত রাখা, তদুপরি দেশে সাংবিধানিক শাসনের ধারাকে অক্ষুণ্ন রাখার এক ঝঞ্জাবিক্ষুব্দ সময় অতিক্রম করছেন তিনি। এ সময় প্রয়োজন ছিল- আওয়ামী নেতাদের সব ধরনের লোভ-লালসার উর্ধে উঠে, সাংগঠনিক ভাবে একাট্টা থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সমাপ্ত করা। তাদের ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগকে মানুষ দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত করে কি না। কারন যুদ্ধাপরাধের বিচার আগামী বছরেও শেষ হবে কি-না সন্দেহ! আর আওয়ামী লীগ যে হিংস্র সাপটিকে খাঁচায় পুড়েছে, এরা কোনক্রমে ছাড়া পেলে আওয়ামী লীগকেই খাঁচায় বন্দি করবে। আমি নিশ্চিত অর্থ এবং সাংগঠনিক ভাবে এরা আওয়ামী লীগের চেয়ে শক্তিশালী। কাজেই আওয়ামী লীগের এই দুঃসময়ে এর নেতারা আশা করি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। যে ক্যান্সারটি সবে মাত্র ধরা পড়েছে, তাকে সার্জারি করে এখনি নিষ্ক্রান্ত করুন! মানুষকে বোকা বানানো, কিংবা বোকা ভাবার মতো বালখিল্যতা প্রদর্শণ করবেন না।
পরিশেষে আমার ছোট্ট খোকার সম্প্রতি শেখা একটি ছড়া দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। আমার পাঁচ বছরের ছেলে বাংলা টেলিভিশন দেখে দেখে মাতৃভাষা রপ্ত করেছে। ইদানিং সে একটি ছড়াও শিখেছে। প্রায়ই আমাকে হাত-পা নাচিয়ে শোনায়-
"নোটন-নোটন পায়রা গুলো ঝুটন বেঁধেছে
ঐ পাড়েতে ছেলে মেয়ে নাইতে নেমেছে
দুই ধারে দুই রুই-কাতলা ভেসে উঠেছে।
কে দেখেছে, কে দেখেছে, দাদা দেখেছে
দাদার হাতে কলম ছিল ছুঁড়ে মেরেছে
উঁহু, বড্ড লেগেছে!!"
এই "বড্ড লেগেছে" এমন যত্ন করে বলে যে, সবাই হেঁসে কুটি-কুটি। আগামী কাল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সে ছড়াটি আবৃতি করবে।
নিউইয়র্ক, ১৩ই এপ্রিল ২০১২