জাতির ‘বিবেক’ যখন আদালতের কাঠগড়ায়!

জহিরুল চৌধুরী
Published : 15 May 2012, 03:46 PM
Updated : 15 May 2012, 03:46 PM

খুব নিরবে আমাদের ইতিহাসের একটি সংকটময় অধ্যায় অতিক্রম করছি আমরা। দেশের সচেতন নাগরিকরা এই সঙ্কট অনুভব করতে পারছেন কি না আমি জানি না। কিন্তু দূর থেকে মনে হয় একটি কালো মেঘ বয়ে নিয়ে আসছে এক ঘূরণীবার্তা। দল-উপদলে বিভক্ত এ কালের মুক্তিযোদ্ধারা এটি সামাল দিতে পারবে কি না আমার সন্দেহ!

বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম- দেশের একজন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী দাঁড়িয়েছেন আদালতের কাঠগড়ায়। ৭৫ বছর বয়সী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে এসেছেন একাত্তরের রাজাকার কমাণ্ডার সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো খানিকটা। এ কি করছি আমরা? কিভাবে আমরা বুদ্ধিজীবীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি মৃত্যু পরোয়ানা! আমাদের কি মনে নেই এই মৌলবাদী ঘাতকরা কী নির্মমভাবে হত্যা করেছে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে! এরা কি মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে? অবশেষে আওয়ামী লীগ যদি ছেঁড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি বলে রণে ভঙ্গ দেয়, তখন দেশের এই কীর্তিমানদের নিরাপত্তা দেবে কে?

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। ৮০-র দশকে কলকাতার বুদ্ধিজীবী সমাজ তার বাংলা বক্তৃতার ক্যাসেট কিনতেন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশে অন্তত দুইটি প্রজন্মের শিক্ষক-গুরু স্থানীয়। আজ তিনি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত, তখন আমার মনে হয় দেশের শিক্ষিত সমাজের আর ইতস্তত করার সুযোগ নেই। এ বিচার অসমাপ্ত রেখে রণে ভঙ্গ দিলে খোদ খড়গ নেমে আসবে দেশের সুধী সমাজের ওপর!

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে আনিসুজ্জামান কি বলেছেন, আর এতে সাকা চৌধুরী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কতটা দেখে নিতে চেয়েছেন, তা বোধ করি এ প্রজন্মের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া হবে অবিমিশ্রকারিতা!

নিউইয়র্ক, ১৫ মে ২০১২