দাঁতের যত্নে দাঁতের চিকিৎসা

জহিরুল হোসাইন খান
Published : 13 May 2017, 07:05 PM
Updated : 13 May 2017, 07:05 PM

'দাঁত থাকতে দাঁতের যত্ন আমরা সময়মত নেই না' এ কথাটি প্রবাদ বাক্য হলেও বাস্তবে আমরা কতজনই বা আমাদের নিজেদের দাঁতের যত্ন নিয়ে থাকি? আসলে এখানেও অবহেলা। আমরা যথাযথ যত্ন নেইনা। এ কথাটি বলতে গিয়ে আমাকে ২০ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আমার দাঁতে ব্যাথা অনুভব করায়, মৌচাক মার্কেটে একজন দন্ত চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হই। তিনি আমার দাঁত দেখার পর বললেন আপনার দাঁতে পাথর হয়ে গেছে তাই স্কেলিং করতে হবে এবং অন্য কিছু কাজ আছে যার জন্য আপনাকে টাকা ৮০০০ টাকা দিতে হবে। আমি সেই যে আসলাম আর কোনদিন ঐ দন্ত ডাক্তারের কাছে যাইনি। এক ফার্মেসিতে গিয়ে দাঁতের ব্যাথার কথা বললে আমাকে যে ওষুধ দেয় তাতেই ব্যাথা সেরে যায়। দাঁতের ডাক্তার তখন খুব কমই ছিলেন। যারা ছিলেন তাদের কাছে গেলে এভাবেই দাম হাঁকাতেন। কারণ মানুষ তখন দাঁতের কোন সমস্যার জন্য খুব একটা দন্ত চিকিৎসক এর কাছে যেতেন না।

যাও ২-৪ জন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝ থেকে যেতেন, তারাও খরচের পরিমানের কথা শোনার পর আর ওদিকে ফিরতেন না কিন্তু যারা খরচ মিটাতে সক্ষম ছিলেন বা বিত্তবান ব্যক্তি যারা বা যাদের কোন উপায় ছিলনা দন্ত চিকিৎসক এর কাছে না গিয়ে থাকা উনারাই তখন গিয়েছেন। আজকাল অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক দন্ত চিকিৎসক ক্লিনিক খুলে বসেছেন। যথাযথ যত্নের অভাবে গত বছর আমার বাঁম চোয়ালের ভিতরে উপরের একটি দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং দাঁতের মাড়ি ফুলে ব্যথা শুরু করে। আমি আমার বাসা থেকে অদূরেই  ১৮০ উত্তর গোড়ান (টেম্পু স্ট্যান্ড) খিলগাঁও, ঢাকায় অবস্থিত গোড়ান ডেন্টাল ও ফিজিওথেরাপি সেন্টার এর ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন জনাবা ফেরদৌসি আক্তার এর শরণাপন্ন হলে তিনি দাঁতটি উঠিয়ে ফেলার জন্য পরামর্শ দেন। আমি তাতে সন্মতিজ্ঞাপন করলে তিনি স্বল্প খরচেই অত্যন্ত যত্নসহকারে ব্যথামুক্ত অবস্থায় আমার দাঁতটি উঠিয়ে দেন এবং ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে সুস্থ হয়ে যাই। এক বছর পর আবার ডান চোয়ালের ভিতর নীচের পাটি দাঁতের মাড়ি ফুলে গিয়ে ইনফেকশন হওয়ার কারনে প্রচুর ব্যথা অনুভব করি। আবার ছুটে যাই ডেন্টাল সার্জন জনাবা ফেরদৌসি আক্তার এর নিকট।

এবার সেই ক্লিনিকে যাওয়ার পর দেখলাম অনেক কিছুর পরিবর্তন। দু'টি ওটি রুম, একটিতে বসেন ডেন্টাল সার্জেন জনাবা ফেরদৌসি আক্তার, তিনিই এ ক্লিনিকের প্রধান, অন্য রুমে বসেন ডেন্টাল সার্জেন জনাবা ফারহানা তাসনিম। একটি রুমে আছে ফিজিওথেরাপি'র সরঞ্জাম। আছে রুগীদের অভ্যর্থনা রুম। নামাজ পড়ার রুম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দুটি ওয়াশরুম। এখানে ফিজিওথেরাপি'র জন্য দু'জন কনসালটেন্ট রয়েছেন। আছেন ম্যানেজার, ট্যাকনেশিয়ান,রিসিপসনিষ্ট সহ আরও অনেকেই। এ ক্লিনিকের প্রত্যেকের আচরণ ছিল মধুময়। একে অন্যের কাজে সহযোগিতা করার মন মানুসিকতা ছিল অভূতপূর্ব।

আমি গত ১০/০৫/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে যখন দাঁত ক্লিনিং করাচ্ছিলাম তখন কয়েকজন রোগী আসেন ডাক্তার জনাবা ফেরদৌসি আক্তার মহোদয়ার নিকট। উনি তাদের কথা শুনে সহযোগীদের বলেন উনাদেরকে অল্প টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কারণ উনারা গরীব মানুষ। আমি এ কথা শুনে মুগ্ধ হই। ক্লিনিকের প্রত্যেকের আচারণ ছিল মনোমুগ্ধকর ও সন্তুষজনক। রোগীদের যত্ন সহকারে ব্যথামুক্ত অবস্থায় দাঁত উঠানোই হলো সার্জেনদের প্রত্যয়।

আমার প্রত্যাশা প্রতিটি ক্লিনিক 'গোড়ান ডেন্টাল ও ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক' এর মত একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরী করে রোগিদের চিকিৎসা প্রদান করবেন। একে অন্যের সহযোগী হবেন। রোগিদের সাথে ডাক্তারসহ অন্যরা সুসম্পর্ক রাখবেন ও ভালবাসবেন। তাতে রোগিরা যেমন আনন্দিত হবেন তেমনি ক্লিনিকও হবে লাভবান। ডাক্তার ফেরদৌসি আক্তার, ডাক্তার ফারহানা তাসনিম, জনাব মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান, রুকন উদ্দিন, কুমু – তাদের সাহচর্য পেয়ে আমি খুব উৎফুল্ল। তাদের প্রতি আমার দোয়া রইলো। ভবিষ্যতে এ ক্লিনিকটি তাদের সেবা, কর্ম ও সুন্দর আচরণ দিয়ে আরও আরও আরও অনেক রোগীদের মন জয় করে নিবেন, আরও উন্নতি করবেন, মানুষের দোয়া নিবেন এমন বিশ্বাসেই আমি করি।