মশা নিধনের কেমিক্যাল পাচারকারী ঢাকা উত্তর ১ নং ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশন কর্মী মান্নান

আসাদুজ্জামান
Published : 14 August 2017, 04:49 AM
Updated : 14 August 2017, 04:49 AM

শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথার অনুভূতি। কখনও জ্বর আসে আবার ছাড়ে । মৃত্যু যেন দ্বারে। এমনটাই মনে হয় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির। চিকুনগুনিয়া মশা বাহিত ভাইরাস জ্বর। ডেঙ্গুর মতোই এ ভাইরাসটিও এডিস ইজিপ্টটাই এবং এডিস অ্যালবপ্টিকাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মতই মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। এই জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চিকুনগুনিয়া নামক ভাইরাস জ্বর মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ঢাকার বেশির ভাগ হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত জ্বরের রুগীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি বলে জানা যায়। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আমদানি করা উন্নত মানের মশা, মাছি নিধনের ঔষধ বা কেমিক্যাল স্প্রে করার পরও এমন কী কারণ থাকতে পারে যার কারনে দিন দিন চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বেড়েই চলছে? তবে কি সরকারের আমদানিকৃত মশা নিধনের ঔষধ বা লিকুইড কেমিক্যাল ভেজাল? সেটা তো হবার কথা নয় । তবে ঘটনার অন্তরালের ঘটনা কী?

অন্তরালের ঘটনা জানতে অনুসন্ধান প্রয়োজন। আর তাই অনুসন্ধানের জন্য প্রথমেই বেশ কিছু দিক নির্বাচন করি। সাথে একটি রেকি টানা হয় এবং সেই মোতাবেক সোর্স নিয়োগ। সাথে শুরু হয় অনুসন্ধান, চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের কারণ কী?

গত ৮ জুলাই ২০১৭  শনিবার আনুমানিক সময় ১১ টা ৩০ মিনিট এক গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি জয়নাল মার্কেট সংলগ্ন স্থানীয় বাড়ির মালিক মোঃ রাকিব হোসেনের বাড়ির এক ভাড়াটিয়া মান্নান (৪৫) যিনি ১নং উত্তর ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের একজন কর্ম, তিনিই ইসমাইলের টি-ষ্টলের সামনে ভাড়া করা সিএনজির দ্বারা সরকারী মশা নিধনের কেমিক্যাল অবৈধ ভাবে পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঘটনার সত্যতা যাচাই এর জন্য সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে দেখি, পাচারকারি মান্নানের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ। পাচারের মালামাল পরিবহনের জন্য একটি সিএনজি (ঢাকা মেট্রো-থ ১৪-৩২৬৯) ভাড়া করে রেখেছে ।

যেহেতু প্রমাণ বা এভিডেন্স ছাড়া সব মিথ্যা সেহেতু আমি আমার গোপন ক্যামেরার ভিডিওটি চালু রাখি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা শেষে দূর থেকে লক্ষ্য করলাম এক ব্যক্তি নীল রঙের বড় ৪৫-৫০ লিটার কেমিক্যাল ভর্তি একটি গ্যালন নিয়ে সিএনজির দিকে এগিয়ে আসছেন এবং পর পর তিনি ৪৫-৫০ লিটারের ৫টি কেমিক্যাল ভর্তি গ্যালন সিএনজিতে তুললেন।

প্রথমে আমার ধারনা ছিল এটাই বুঝি সেই মশার প্রেমিক মান্নান কিন্তু না আমার ধারনা ভুল। সে ছিল মান্নানের অবৈধ পাচার কাজের সহযোগী মাত্র। অপেক্ষার শেষ হয়। পেয়ে গেলাম সেই মশার প্রেমিক মান্নানকে। হাজির হলেন মান্নান।

সিটি কর্পোরেশনের দেয়া মশা নিধনের কেমিক্যাল অন্যত্র কী কারণে বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশনের দেয়া মশার কেমিক্যাল দিয়ে পিঁপড়াও মরে না, মশা তো অনেক দূরের কথা!

আসলে বিষয়টি কতটুকু সত্য তা নিশ্চিত করতে পারবেন ১নং ওয়ার্ড উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

মান্নানের বক্তব্য অনুযায়ি তিনি পেস্টিসাইডে চাকুরি করেন এবং পাচারের আলামত নাকি পেস্ট্রি সাইডের কেমিক্যাল। তবে মান্নান কি কর্পোরেশনের মশা নিধনের কর্মী নয়? যদি কর্মি নাই হবেন তবে কর্পোরেশনের পোশাক পরে তিনি কী করেন?

আসল সত্য এটাই যে মান্নান তার আসল পরিচয় গোপন করেছে কারণ সে বুঝে গেছে যে সরকারি কিছু পাচার করা গুরুতর অপরাধ। মান্নান সিটি কর্পোরেশনের একজন বেতন ভুক্ত কর্মী যার সাক্ষ্য দেয় ঘটনা স্থলের এক প্রতক্ষ্যদর্শি। মান্নান অতি ধূর্ত তাই ক্যামেরার থেকে আড়ালে সরে যায় পরবর্তীতে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ফজলুল হক এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন যে, এই মান্নান সিটি করর্পোরেশনের মশা নিধনের এক কর্মচারি। প্রায়ই শত শত লিটার সরকারি কেমিক্যাল অবৈধ ভাবে বাহিরে বিক্রি করে আসছে বহু দিন যাবত। সক্রিয় একটি চক্রের সাথে মান্নানের রয়েছে গোপোন যোগসাজোশ। ফলে চোরাই কেমিক্যাল আসা মাত্রই, মান্নান বিক্রির খবর দেয়া মাত্র ঐ চক্রের সদস্যগণ হাজির হয়ে যান নির্দিষ্ট স্থানে। মোটা অংকের বিনিময়ে সরকারি এসব কেমিক্যাল লোক চক্ষুকে ধুলো দিয়ে দিনের আলোতেই নিয়ে চলে যায় ঐ চক্রের সদস্যগণ এবং কম মূল্যে ক্রয় করা সরকারি মশা নিধনের উন্নতমানের কেমিক্যাল দিয়ে তৈরী করা হয় ফিনিসসহ বিভিন্ন জাতিয় কীটপতঙ্গ মারার ঔষধ যা বাজারে বিক্রি হয় চড়া দামে।

এ বিষয়ে মান্নানের বাড়ির মালিক মোঃ রাকিব হোসেন ঘটনা সম্পর্কে বলতে নারাজ। তবে বাড়ির মালিকের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর মান্নান আমার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে এবং আমাকে ফোন করে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের খেলা সেখানে আপোষ তো দূরের কথা ওর মুখ দেখাও পাপ।

যেখানে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার আজ ঘরে ঘরে সেখানে মান্নানের উচিত কী ছিল? তার উপর ন্যস্ত কাজটি সততার সাথে করা। কিন্তু মান্নান সেটা না করে অর্থের লোভে অন্ধ হয়ে বিকিয়ে দিল নিজের বিবেকে। করলেন মশার সংগে অবৈধ প্রেম বিনিময়ে পেল কিছু কালো টাকা।

মান্নানের মত অনেক মান্নান আছেন যারা এভাবে সরকার কর্তৃক দেয়া জনগণের কল্যানে ব্যবহার করার বিভিন্ন জিনিসপত্র অবৈধ ভাবে পাচার করে হচ্ছেন রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের কেমিক্যাল সঠিক ভাবে ব্যবহার না করে চুরি করে অবৈধ ভাবে পাচার করা হচ্ছে সরকারি মানসম্মত মশা নিধনের কেমিক্যাল। মশা নিধনের জায়গায় করা হচ্ছে মশা সংরক্ষণ। ফলে মশার বিস্তার দিনকে দিন বেড়েই চলছে আর এই কারনেই চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস জনিত রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে কেউনা কেউ। মারা যাচ্ছে অনেক আক্রান্ত রোগী। অন্যদিকে মান্নানদের মত অসৎ লোকেরা মনের মাধুরি মিশিয়ে সাঁতার কাটছে কালো টাকার নীল সাগরে।

মান্নানের অবৈধ কীর্তির জের ধরে চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগিরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। কেউ হয়ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে আবার কেউ হাসপাতালের বেডে থাকা অবস্থায়ই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে সব ছেড়ে।

এভাবে  বেশি দিন চলতে থাকলে সরকারসহ ঢাকা উত্তর ১নং ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষ হবেন প্রশ্নবিদ্ধ। হারাবেন জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ভালোবাসা। ফলে এসব অসৎ চোর বা চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি।