মোবাইল কোর্টের নামে ইউ.এন.ও এর ক্ষমতার অপব্যবহার

জামান২৪
Published : 26 March 2012, 05:03 PM
Updated : 26 March 2012, 05:03 PM

২৬/৩/১২ তারিখের দি ডেইলি স্টার (লিংক) এ একটি খবর পড়লাম ৷ খবরে প্রকাশ, সুন্দরগঞ্জের ইউ.এন.ও এর অপসারণের দাবিতে স্থানীয় শত শত জনতা মিছিল করেছেন ৷ ইউ.এন.ও এর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তিনি মোবাইল কোর্টের নামে জনগণকে হয়রানি করেন৷ তিনি মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন ৷ বিষয়টি আপত্তিজনক এবং লজ্জাজনকও বটে৷ প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয় জনগণের সেবা করার জন্য ৷ কিন্তু জনগণের সেবাকারকরা যখন তাদের শোষক হয়ে ওঠে, তখন নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হতে থাকে৷ এটি তারই একটি বহি:প্রকাশ ৷

আবার রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে থাকা কোন ব্যক্তিকে যদি বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়, তাহলে তার ব্যপক অপপ্রয়োগ ঘটবেই ৷ বর্তমানে দেশে একটি পৃথক বিচার বিভাগ রয়েছে ৷ সেখানে আইন পড়–য়া ব্যক্তিরা বিচারক হচ্ছেন৷ তারপরও মোবাইল কোর্টের নামে কেন প্রশাসনের হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে রাখতে হবে, তা বোধগম্য নয় ৷

যে আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সেই আইনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে প্রায়ই দেখা যায়না ৷ ঐ আইন মোতাবেক, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বহী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে সংঘটিত বা উদঘাটিত কোন অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্ট করতে পারবে ৷ কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, যে অপরাধের দায়ে কোন ব্যক্তিকে মোবাইল কোর্ট সাজা দেয়, সেই অপরাধটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে ঘটেই নি ৷ সেসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে, থানায় বা ইউ.এন.ও অফিসে নিয়ে গেছে, তারপর সেখানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে অপরাধীকে সাজা দেয়া হচ্ছে৷ এ প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি মোবাইল কোর্ট আইনের পরিপন্থী ৷

আরেকটি বিষয় হল, মোবাইল কোর্ট কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি তার দোষ স্বীকার করে, তবেই তাকে মোবাইল কোর্ট সাজা দিতে পারে ৷ দোষ স্বীকার না করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়মিত আদালতে প্রেরণ করে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করতে হবে৷ মোট কথা, দোষ স্বীকার না করলে মোবাইল কোর্ট আইন মোতাবেক মোবাইল কোর্ট কোন ব্যক্তিকে সাজা দিতে পারে না ৷ কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখি, মিডিয়ার সামনে দাড়িয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করছে ৷ তাহলে সেই ব্যক্তি মোবাইল কোর্টের সামনে দোষ স্বীকার করেছে, তা কি বিশ্বাস করা যায়? আমরা এর উদাহরণ দেখেছি হরতাল চলাকালীন সময়ে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এর কার্যক্রমে ৷

আমরা চাই, প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের দায়িত্ব আইনের মধ্যে থেকে পালন করুক ৷ তারা যেন তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বকে ক্ষমতা মনে না করেন ৷