জামায়াতে ইসলামী এবং রাজনীতিতে ‘ইনক্লিউসিভনেস’

বিজন সরকার
Published : 18 July 2011, 03:57 AM
Updated : 22 April 2015, 07:57 AM

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যখনই সংকটে পড়ে, ঠিক তখন নির্লজ্জ, অবিবেচনাপ্রসূত ও প্রকারান্তরে দেশদ্রোহী একটি দাবি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উত্থাপন করা হয়। দাবিটি রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনুষঙ্গে 'ইনক্লিউসিভনেস'। মানে সকল রাজনৈতিক দলের মিলেমিশে রাজনীতি করার সুযোগ দান; অতীত না ঘেঁটে, ভুলে গিয়ে একটি কল্পলোকের গণতান্ত্রিক স্বপ্নের কথা বলা। এভাবে সাধারণ মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনার অপচেষ্টা ক্রমশই শক্তিশালী হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের সমাজও এ অনৈতিক ও প্রাণঘাতী পরিবর্তনের প্রতি এখন অনেক বেশি সহনশীল বললে ভুল হবে না।

দাবিটির মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, এমনকি ধর্মীয় সততাও নেই। আছে চতুরতা, শঠতা ও রাজনৈতিক ভণ্ডামি। এটি সমাজে গ্রহণযোগ্য করার জন্য একদল পথভ্রষ্ট ও ভয়ঙ্কর মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর কুপ্রভাবের একটি উদাহরণ দিই। ২০০৮ সালের আগেও ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করে এমন কেউ সমাজে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়ার সাহস দেখাত না। আজকাল শিবিরের নেতাকর্মীদের তেমন সামাজিক সমস্যায় পড়তে হয় না। বাস্তবে এর প্রভাব অনেকটা নিরব ক্যান্সারের মতো। এটি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কেবল সমাজের সামনে নিয়ে আসছে, তা নয়। সমাজে যারা প্রতিনিয়ত একাত্তরের চেতনার শ্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তুলেন, জামায়াতের প্রতি তাদেরও সহানুভূতি ক্রমবর্ধিষ্ণু।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় বিটিভিতে তৎকালে প্রচারিত একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অনেকগুলি ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফেসবুকে নিয়মিত বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দিয়ে থাকেন। তবু কামারুজ্জ্বামানের ফাঁসি কার্যকর করার আগে বা পরে উনাকে তার ওয়ালে এ বিষয়ে মতামত দিতে লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এক ম্যাচে ভারত বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে হারানোর পর ভারতবিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি 'ধুতি' শব্দটির অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এসব বিষয় এখন আর লোকে অন্যায় মনে করছে না। সমাজে এগুলো স্বাভাবিক।

যাহোক, রাজনীতিতে 'ইনক্লিউসিভনেস'এর দাবিটি ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশে-বিদেশে একটি শ্রেণি জোরালোভাবে উপস্থাপন করে আসছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রায় সকল শীর্ষনেতা জড়িত। অপরাধীদের বিচার হচ্ছে; রায়ও কার্যকর হচ্ছে। ফলে স্পষ্টতই বুঝা যায়, কল্পলোকের স্বপ্নচারীদের 'ইনক্লিউসিভনেস' শ্লোগানের পিছনের উদ্দেশ্য মহৎ নয়। বরং বাংলাদেশ জামায়াতের মতো একটি ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট শক্তির অসুরদের রক্ষার জন্য বিবেকবর্জিত ও দেশবিরোধী চিন্তা লালন করার অপচেষ্টা মাত্র।

যারা রাজনীতিতে 'ইনক্লিউসিভনেস'এর কথা বলছেন, তারা সবাই জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী, ব্যাপারটি সে রকম নয়। মূল প্যারামিটার হচ্ছে, এরা সবাই আওয়ামীবিরোধী। জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্য, বেশ কজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে খুশি হতে পারছেন না। নিজেদের ব্যক্তিগত হতাশা, রাজনৈতিক ব্যর্থতা, পরশ্রীকাতরতা এবং সর্বোপরি আওয়ামীবিরোধিতাই এর পিছনের মূল কারণ বলা যায়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। কামারুজ্জামানকে কেন ফাঁসিতে বিশ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হল, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এমনকি কেন কামারুজ্জামানকে শুক্রবারে ফাঁসি না দিয়ে শনিবারে ফাঁসি দেওয়া হল সেটিরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। সরকারকে কামারুজ্জ্বামানের পরিবারের কাছে মাফ চাইতে পর্যন্ত বলেছেন তিনি। ডা. চৌধুরী ২০১০ সাল থেকে আওয়ামীবিরোধী অবস্থান নিতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তখন থেকে জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ও কৌশলী সহযোগিতায় জনপ্রিয় টকশো 'তৃতীয় মাত্রা'য় অংশ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করার বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

আরেক মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সাদেক খান একাত্তর জার্নালে সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া এবং একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা অবান্তর বলে দাবি করেছেন। তার মতো সচেতন মানুষ যখন একাত্তরের ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত করার জাতির নৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করেন, তখন বিষয়টি আমাদের ভাবনার জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে বৈকি।

তবু বলব, সাদেক খানের অবস্থান অভিনন্দনযোগ্য। উনি রাখঢাক না করেই বা কোনো ভনিতার আশ্রয় না নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দল, জামায়াতকে দেশের রাজনীতিতে সামগ্রিকভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য 'ইনক্লিউসিভনেস'এর শ্লোগান দিলেন। তিনি একা নন, বিএনপিপন্থী অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী তার চিন্তার সমান্তরালে অবস্থান নিয়েছেন। তারাও মনে করেন, একাত্তরের বিষয়গুলি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহাবস্থানের পরিপন্থী। এগুলো অবান্তর। তারা সর্বজনীনতার নীতির তাগিদ দেন। বিএনপির ভিতরের নেতা-কর্মীদের বড় অংশও তাই মনে করেন। ২০১০পরবর্তী বিএনপির যত নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে, ততবারই তাদের রাজনৈতিক পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন মনে হয়েছে। তারা কি আসলেই বিএনপির রাজনীতি করছেন নাকি জামায়াতের, তা বুঝা দুরূহ।

যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট। এর পেছনে রয়েছে দলীয় প্রধানের আন্তরিকতা ও ইতিহাসসচেতনতা। তবে আওয়ামী লীগের ভিতরেও জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল বহু নেতা-কর্মীর সন্ধান পাওয়া যায়। এটি কেবল মাঠ পর্যায়ে রয়েছে, তা নয়; দলটির উপরিভাগেও বেশ কজন নেতার সহানুভূতি আঁচ করা যায়। দলটির নীতিনির্ধারকদের উচিত, এদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। মনে রাখতে হবে, 'যে একবার জামায়েত ইসলামীর কর্মী, চিরকালই সে তাই'– তাকে আপনি আওয়ামী লীগের সদস্যই বানান আর বিএনপির। এ ক্ষেত্রে বিপরীতটি সম্ভব নয়।

সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতি সামাগ্রিক 'ইনক্লিউসিভনেস'এর জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে ঠাঁই দেওয়া না দেওয়ার যে দ্বন্দ্ব, তা আরও কয়েক দশক চলবে। বৈশ্বিক বাস্তবতা, দেশের ভিতরের ক্রিয়াহীন রাজনৈতিক চর্চা এবং ধর্মীয় কারণে জামায়াতের রাজনীতি টিকে থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে তাদের নিয়ে বর্তমান রাজনীতিতে যেমন 'ইনক্লিউসিভনেস' অসম্ভব, ঠিক তেমনি তাদের আদর্শের রাজনীতি ধ্বংস করাও সম্ভব নয়। ফলে আগামী দুয়েক দশক দেশের রাজনীতিতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।

চারটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জামায়াতের রাজনীতির স্থায়ী স্থান দেওয়ার পিছনে ভূমিকা রেখেছে। যার কুফল জাতি হিসেবেে আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।

প্রথমটি হল, পঁচাত্তরের পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ড। যার মধ্য দিয়ে জামায়াতের রাজনীতির প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছিল। দ্বিতীয়টি হল, জিয়াউর রহমানের দালাল আইন বাতিল করে সকল যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া। এতে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতিতে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের 'প্যাকেজের' সম্ভাবনা দেখেছে। তৃতীয়ত, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ধর্মীয় রাজনীতিতে অনুমোদন দান এবং 'সেলিব্রিটি' রাজাকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করা। চতুর্থত, আরেক সামরিক শাসক হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে আরেকটি ব্রেক-থ্রু পেয়েছিল ইসলামিক দলগুলি। এখানে উল্লেখ্য যে, এরশাদ সরকার যখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও প্রতিবাদ করেছিল এবং খুব সম্ভবত তিন দিনের হরতাল ডেকেছিল ওরা।

আবারও উল্লেখ করছি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত একটি অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি বাড়বে বৈ কমবে না। এটি সত্য যে, আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলি চেষ্টা করে যাবে যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ফ্যাসিস্ট আদর্শ বাজার না পায়। দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্যও এটি অপরিহার্য। অন্যদিকে বিএনপির জামায়াত-নির্ভরতা ক্রমশ বেড়ে যাবে। উভয় দলের প্রায় সমগোত্রীয় আদর্শ, জামায়াতের বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি ও ক্যাডার বাহিনী এতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তাই বলা যায়, জামায়াতের রাজনীতি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমাদের মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত করার প্রচেষ্টাটি চলতেই থাকবে। ডা. জাফরউল্লাহ এবং সাদেক খানের মতো বড় বড় ব্যক্তিত্ব জামায়াতে ইসলামীকে দেশের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করার জোর দাবি জানাতে থাকবেন।

তাই কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে দেশবাসীকে ভাবতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দেশে রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে কি প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব? এতে সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ কি সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারবে? একাত্তরে যাদের দ্বারা চার লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছে, যারা সাধারণ মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলেছে, তাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে আদর্শিক গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব?

বিশ্বের কোনো দেশেই স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার ইতিহাস নেই। সমাজে অবহেলিত হয়ে বসবাস করতে হয় তাদের। বিশ্বের বড় দুটি অর্থনৈতিক শক্তি আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশীয় সহযোগীরা ব্রিটিশ সেনাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি চিনিয়ে দিত। ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুয়ায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ দেশীয় সহযোগী ব্রিটিশ সেনাদের সহযোগিতা করছে। এরা সমাজের ধনী ব্যক্তি ছিল। শত শত কালো দাসকে ব্রিটিশের পক্ষে যুদ্ধ করার শর্তে ব্রিটিশপ্রভুরা মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু ওরা মুক্ত হয়েই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আমেরিকা যখন স্বাধীন হয়, তখন ওই ব্রিটিশ সহযোগীদের ২০ শতাংশ আমেরিকা ছেড়ে ব্রিটিশদের আরেক সাম্রাজ্য, কানাডার অন্টারিও, কুইবেক ও নোভাস্কশিয়াতে চলে যেতে বাধ্য হয়। জর্জ ওয়াশিংটন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ''আমরা পরাজিত ব্রিটিশ সৈন্যদের কিছুই বলব না। তবে যারা এই সৈন্যদের মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি দেখিয়েছে, তাদের পিছনে আমরা একটি গুলিও খরচ করব না। তাদের গরম আলকাতরায় চুবিয়ে মারব।''

পরবর্তীকালে আমেরিকায় এই স্বাধীনতাবিরোধীদের সামাজিক অবহেলার মধ্যে দিন কাটিয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়।

কোরিয়া ১৯১০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের কলোনি ছিল। বাংলাদেশের জামায়াতের মতো কোরিয়ার একটি গ্রুপ জাপানের সঙ্গে থাকার জন্য স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। এদের কোরিয়ান ভাষায় 'ছিনিল্পা' (জাপানপন্থী) বলা হয়। ১৯৪৫ সালে কোরিয়া স্বাধীন হওয়ার পরপরই 'ছিনিল্পা'দের আইনের আওতায় আনতে বিশেষ কমিটি ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আটত্রিশটি মামলা পরিচালনা করে। ফাঁসির আদেশসহ বহু 'ছিনিল্পা'র নাগরিক অধিকার বাতিল করে দেওয়া হয়। ১৯৮০-১৯৯৯ সালের দিকে কোরিয়া যখন গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা করে, তখনও আবার যে সকল 'ছিনিল্পা' আইনের আওতায় আসেনি, তাদের তা করার জোর দাবি উঠে। এখনও মাঝে মাঝে কোরিয়ার রাজনীতিতে এটি হট ইস্যু। ওরা বাংলাদেশের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা পাওয়ার চিন্তাও করতে পারে না। হারানো নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার কথা ভুলেও মুখে আনে না ওরা। এমনকি তাদের ধর্ম তাদের সে সুরক্ষা দেয় না।

কোনো একটি দল কিংবা গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট আদর্শের বিরোধিতা করে ব্যর্থ হওয়া মানে এই বুঝায় না যে, তারা তাদের আদর্শ ভুলে গেছে। আজ যদি কোরিয়াতে 'ছিনিল্পা'দের রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হত, অবশ্যই জাপান তার ভূরাজনৈতিক কারণে কোরিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারত। তাতে আজকের কোরিয়ার যে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে তা হত কি না সে বিষয়ে কোরিয়ানরা জোর সংশয় প্রকাশ করেন।

জামায়াত সে তুলনায় 'ভাগ্যবান' রাজনৈতিক দল! তারা কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, সাধারণ মানুষকে পশুপাখির মতো হত্যা-ধর্ষণ করেছে; বাড়িঘরে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এর পরও কি এরা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল থাকতে পারে?

এরাই এখন আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে, কুপিয়ে, গ্রেনেড দিয়ে মারে; মেশিন দিয়ে রগ কাটে বিপক্ষের লোকদের। দলটির শীর্ষনেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে বলে দেশে-বিদেশে প্রচার চলছে যে, সরকার ধর্মীয় নেতাদের ধরে ধরে বিচার করছে। সমাজের একটি বড় অংশও এই মানবহত্যাকারী ও ধর্ষকদের ধর্মীয় নেতা হিসেবেই জ্ঞান করে!

ক্ষমতার রাজনীতি আমাদের বিবেকবান সমাজকেও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে অন্ধ করে তুলছে। আমরা বিবেকবর্জিত হয়ে 'ইনক্লিউসিভনেস'এর কথা বলছি। জামায়াতকে যদি এখনই থামানো না যায়, দেশের চলমান অগ্রগতি বাধার মুখে পড়বে, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ দল কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতে জড়াবে না। দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সকল অগ্রগতিরই বিরোধিতা করবে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য উন্নত বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের ভাবাদর্শে একটি উগ্র জনগোষ্ঠী নির্মাণ।

বিএনপিপন্থী যে বুদ্ধিজীবীরা 'ইনক্লিউসিভনেস'এর তাগিদ দিচ্ছেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে এমনটি বলছেন বলে মনে হয় না। কারণ বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট বাড়লে বিএনপির কমবে। কারণ দল দুটির আদর্শিক পার্থক্য স্পষ্ট নয়। সোজাভাবে বলা যায়, আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ভোটের ক্ষেত্রে জামায়াত ও বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই জামায়াতের উত্থান মানেই বিএনপির পতন।

বাংলাদেশের রাজনীতির এই সত্যগুলো মাথায় রেখে 'ইনক্লিউসিভনেস'এর বন্দনাকারীরা কথা বললে দেশেরই উপকার হত।