লোকমানদের বাঁচতে দিন

জিয়া হক (জিয়াউল হক)
Published : 3 Nov 2011, 05:02 PM
Updated : 3 Nov 2011, 05:02 PM

এক বন্ধু প্রায়ই বলত- তোমার ২টি শার্ট। একটা খুবই সুন্দর। কাপড় ভাল। দামীও বটে। অন্যটা স্বাভাবিক। দামেও কম। বলতো কোনটা তুমি বেশি দিন পড়তে পারবে? কেন? ভালটা। ও হাসত। বলত- ভালটা দ্রুত ছিড়ে যাবে। আমি জানতে চাইলে ব্যাখ্যা দিত। এটা অবশ্য ছোট বেলার কথা।

এখন অবশ্য ব্যাপারটা বুঝি। মনে পড়লে ভাবি। আনমনে হয়ে থাকি। আজ মেয়র লোকমানকে নিয়ে এমনই ভাবতে হচ্ছে। যেখানে একজন ভাল মানুষ বাচেঁ না। টিকে না। জিয়েয় না।

নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন। দু'বার যিনি শ্রেষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। হয়েছেন সম্মানিত। বয়ে এনেছেন সুনাম। দেশের। দশের। এলাকার।

"গত মঙ্গলবার রাত ০৮টার দিকে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে বসে বৈঠক করার সময় মুখোশধারী এক সণ্ত্রাসীর গুলিতে গুরোতর আহত হয়েছিলেন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টার দিকে লোকমান হোসেন মারা যান"। দৈনিকের খবর এটা।

আমার খবর ভিন্ন। আমরা একজন লোককে টিকাতে পারি না। বাঁচাতে পারি না। নিরাপত্তা দিতে পারি না। তাও সাধারণ মানুষ নয়। ভাবুনতো আমরা সাধারণ মানুষ কীভাবে আছি। কীভাবে বেঁচে আছি। আমাদের একজন মেয়রের নিরাপত্তা হল এই। তাও সরকারী দলের মেয়র। ব্যাপরটা মাথায় ধরার কথা নয়।

সণ্ত্রাস, চাঁদাবাজ, গুণডাদের কাছে আমরা কতটা বন্দী। কতট অসহায়। কতটা নিরাপত্তাহীন। সমাজে যারা শান্তি কায়েম করেন। যারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। সুখে দুখে কাছে ছুটে যান। তাদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারি না। আমরা কোন সমাজে আছি। আমাদের সমস্যা কোথায়? আমাদের গলদ কীসে?

মেয়র লোকমান চলে গেলেন। চলে গেলেন চিরতরে। না ফেরার দেশে। আর আমাদের মাঝে ফেরবেন না। আমরা তাকে একটা নিরাপদ জীবন দিতে পারিনি। পারিনি তার মেয়ে নাজাকে তার আদর পেতে। দেইনি নাজার বাবা বাবা বলে কিছুদিন ডাকতে।

লোকমান হোসেন নেই। আমরা আছি? আমাদের ভাবতে হবে লোকমান বার বার জন্মে না। সমাজে একাধিক লোকমানও হয় না। লোকমানদের বাঁচতে দিন। লোকমানরা না বাঁচলে আপমরা বাঁচব না। বাঁচবে না আমাদের দেশ। আমাদের ভবিষ্যৎ।