ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষার্থী প্রতি বছরে খরচ ২০ লক্ষ টাকারও বেশি!

মাধুকর
Published : 11 July 2012, 09:16 AM
Updated : 11 July 2012, 09:16 AM

স্কুলটি এদেশেই, ইউরোপ বা আমেরিকায় নয়! স্কুলটির নাম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এখানে গ্রেড ১২ (এ লেভেল) এর একজন শিক্ষার্থীকে সব মিলিয়ে বছরে খরচ করতে হচ্ছে ২০ লাখ টাকারও বেশি। এক বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (আইএসডি) বন্ধ থাকে ১৮২ দিন।

শতকরা ৮১ ভাগ মানুষ যে দেশে ইউএনডিপির হিসেব অনূযায়ী প্রত্যহ ২ ডলারের নীচে উপার্জন করে (অর্থাৎ দারিদ্র সীমার নীচে!), যে দেশে প্রায় ৬৫% পরিবারের নিজস্ব মালিকানায় কর্ষনযোগ্য জমি নেই (বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ!), যে দেশের ওপর বিভিন্ন ঋন দাতা সংস্থার শত বিলয়ন ঋনের বোঝা, স্কুলটি সেই বাংলাদেশেই, রাজধানী ঢাকার বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত!

এখানে লাখ লাখ টাকা দিয়ে সন্তানকে ভর্তি করায় এ দেশেরই কিছু "নাগরিক", তাদের সন্তানদের "সর্বোত্কৃষ্ট" শিক্ষা দানের জন্যে! তাদের আবার দুঃখ, স্কুলটি কথায় কথায় বন্ধ থাকে, বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আর তাইতে বাংলাদেশের সেই বিত্তবানেরা এখন কিঞ্চিত নাখোশ! স্কুলটি অবশ্য এর চরিত্রগত কারনেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা-বিমুখ, বাঙ্গালী সংস্কৃতি বিমূখ!

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেও বাংলা শিক্ষা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানেনা না এই স্কুলটি! বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলা শিক্ষা দেওয়া হয় না।

এই "রাজসিক" স্কুল টির কথা বাংলানিউজ২৪ এ প্রকাশিত এক খবরের সূত্রে জানা যায়, যেখানে এ-লেভেলের শিক্ষার্থীদের গ্রেড-১১ ও গ্রেড-১২ এর প্রতিটি শ্রেণীতে খরচ করতে হয় বছরে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। এছাড়াও এ-লেভেলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি ও কোচিং বাবদ আরো কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে এই লেভেলে একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে ২০ লাখ টাকারও বেশি খরচ করেন অভিভাবকরা।

গ্রেড-৯ ও গ্রেড-১০ এ প্রতিটি ক্লাসে পড়তে খরচ হচ্ছে বছরে ১৬ লাখ ১২ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়াও ও-লেভেল পরীক্ষার পেছনে শিক্ষার্থীকে আরো কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয় বলে জানান অভিভাবকরা।

গ্রেড-৬, গ্রেড-৭ ও গ্রেড-৮, তিনটি শ্রেণীর প্রতিটিতে পড়তে গড় বার্ষিক খরচ ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ টাকা।

গ্রেড-৩, গ্রেড-৪, গ্রেড-৫ এ তিনটি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে খরচ হয় ১৩ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে কেবল স্কুল ফিই দিতে হয় ৯ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা।

কেজি, গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২ এর প্রতিটি শ্রেণীতে একটি শিশুর পেছনে খরচ হয় বছরে ১২ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে স্কুল ফি গুনতে হয় আট লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা ও ভর্তি ফি দিতে হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও প্রি-কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির আবেদন পত্রের দাম ৫০ ডলার, যা টাকার অংকে ৪ হাজার ২৫০ টাকা।

প্রি-কেজি শ্রেণীতে ৪ বছরের একটি শিশুর ভর্তি হতে নার্সারির চেয়ে বেশি দিতে হবে, স্কুল ফি ৪ লাখ ১০০ টাকা এবং দুপুরের খাবার খরচ দিতে হয় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।

৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্যে রয়েছে নার্সারি। আবেদনপত্র কিনতে লাখে ৪ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়াও এ শিশুর নার্সারি সম্পন্ন করতে বাৎসরিক ফি দিতে হয় ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা। স্কুল ফি দিতে হয়, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৫০ টাকা। স্ন্যাকস এর জন্যে খরচ করতে হবে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। সব মিলিয়ে নার্সারি সম্পন্ন করতেই একটি
শিশুর খরচ করতে হয়, ৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৫০ টাকা।

২ বছরের শিশুদের জন্যে স্কুলটিতে প্লে গ্রুপে ভর্তির ব্যবস্থা। তাদের স্কুল ফি নেওয়া হয় বছরে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

শুধু এ পরিমাণ অর্থ নিয়েই ক্ষান্ত নয় স্কুলটি। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলার ফি, বিভিন্ন ক্লাবের খরচ সহ আরো কয়েক লাখ টাকা দিতে হয়।

স্কুলের এই বিপুল ও অবিশ্বাস্য পরিমান বেতনের ব্যপারে বাংলানিউজ২৪ সুত্রে জানা যায় যে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন যে, যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে তারাই এখানে সন্তানকে ভর্তি করান।

সব কিছু জেনে মনটা কেমন যেন আইঢাই করছে, ভূলে যেতে ইচ্ছে করছে এই দেশেরই ৪১% পাঁচ বছরের বা তার কম বয়সী শিশু খাবার অভাবে মধ্যম থেকে মারাত্মক অপুস্টিতে ভূগে শেষ হয়ে যাচ্ছে, একই কারনে মেধা ও মননে এবং দেহে খর্বাকৃতি একই বয়সী শিশু রয়েছে ৪৩.২% আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী ঘোষিত ক্রিটিকাল লেভেল ১৫% এরও ওপরে ভূগছে ওই একই বয়সী ১৭.৪% বাংলাদেশী শিশু!

এখন খুব ভাল করেই বুঝবো "কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস" প্রবাদটির সারমর্ম!

যে দেশের সার্বিক অবস্থা অতি গুরুভার জনসংখ্যায় ন্যুজ হয়ে পড়া একটি চরম হতদরিদ্র দেশের পর্যায়ে, সেখানে কারা এই সব স্কুল বানায় আর তা কাদের পড়াতে? এই স্কুলে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীর পরিবার গুলো কি সূদুর কোন নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে পৃথিবীতে আস্তানা গাড়া এলিয়েন?

সম্পদের এই চরম বৈষম্য কেন একটি স্বাধীন দেশে? রাষ্ট্রযন্ত্র আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি ঘোড়ার ঘাস কাটে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবী, অনতি বিলম্বে এই ধরনের সকল স্কুল বন্ধ করে দেয়া হোক ও ছাত্র ছাত্রীদের মূলধারার স্কুলে ফিরিয়ে আনা হোক!

তার সাথে অতি অবশ্যই জরুরী ভাবে ওই স্কুলের বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সম্পদ ও আয়ের ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের এই বিপুল বিত্ত বৈভবের উৎস, স্বচ্ছতা ও বৈধতা সম্পর্কে সাধারন জনগনকে অবহিত করা হোক কারন বাংলাদেশ নামের এই দেশটা অন্যান্য দেশের মতোই সাধারণ জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চলে!!