অতি সাধারণ একটি বিয়ের গল্প

জিনিয়া
Published : 19 July 2012, 04:02 AM
Updated : 19 July 2012, 04:02 AM

মেয়েটি ভীষণ চঞ্চল আর ছটফটে। হাসিখুশি, আমুদে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছে। বেশ মেধাবী ছাত্রী। ছেলেটি সবে মাত্র দেশের বাহিরে থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে জয়েন করেছে। সুদর্শন, স্বল্পভাষী ছেলেটি উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান। কোনও এক বন্ধুর পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে চঞ্চলমোতি মেয়েটিকে প্রথম দর্শনেই ছেলেটির ভাল লেগে যায়। শান্তস্বভাবের ছেলেটি সেদিন অতি চঞ্চল মেয়েটির সাথে তেমন একটা কথা বলার চেষ্টা করেনি কিংবা বলা যায় হয়তো কথা বলার সুযোগ হয় নি..কিন্তু যে অল্প সময়টুকু সে অনুষ্ঠানে ছিল, মেয়েটির দিকেই তার মুগ্ধ চোখ তাকিয়ে ছিল।

সেদিন বাসায় ফিরে ছেলেটির মনে হয়েছিল, এই মেয়েটিকে তার জীবনে না পেলে তার জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। স্বল্পভাষী ছেলেটি তার মাকে প্রথম মেয়েটির প্রতি তার ভালোলাগার অনুভূতির কথাটি জানায়। পরদিন বাবা, চাচা, চাচী, ফুফা, ফুপি সবার সাথে আলোচনা হয়। শুরু হয় মেয়ের তত্ত্ব তালাশ। প্রাথমিক খবরে জানা যায় মেয়েটির সব ভাল। কিন্তু একটাই সমস্যা, মেয়েটি দেখতে ভাল না। একমাত্র ছেলের বউ হবে অসম্ভব সুন্দরী, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে তার রূপের খ্যাতি। কাজেই পরিবাবের সবার সিদ্ধান্ত হল দেখতে সুন্দরী না, এমন মেয়েকে ছেলের বউ করে আনার কোনও প্রশ্নই আসে না।আর তাদের হীরের টুকরোর জন্য রূপে-গুণে ভরপুর মেয়ে খোজ করলেই পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে। এ বিয়ে যে অসম্ভব, পারিবারিক যৌথ সে সিদ্ধান্ত অতপর তাদের ছেলেকে জানিয়ে দেয়া হল।

জানা যায়, শান্ত স্বভাবের স্বলভাষী ছেলেটি নাকি অসম্ভব জেদি। অল্প কথায় পরিবারকে জানিয়ে দিল এই মেয়ে ছাড়া সে জীবনে কখনোই কোনও মেয়েকে বিয়ে করবে না। বহু দেন দরবার, মন কষাকষি, রাগারাগি..কিন্তু ছেলের অটল সিদ্ধান্তে সুন্দরী বউ কপালে নেই এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস মনে চেপে নিয়ে অতপর ছেলের পরিবারের সবাই নিমরাজি।

ছেলের বাসায় তো সব রাজি হল, সে যে ভাবেই হোক না কেন..কিন্তু এখনো তো আসল কাজটাই হয়নি। জানা যায়নি মেয়ে কিংবা তার পরিবারের মতামত। ছেলে ভাবল মেয়ের পরিবার পরে দেখা যাবে, আগে মেয়ের মনের সন্ধান করা হোক। তাই ঠিকানা যোগাড় করে ছেলেটি একদিন মেয়েটির হল এর সামনে গিয়ে হাজির। স্বল্প পরিচয়ের ছেলেটিকে হল এর সামনে দেখে মেয়েটি বেশ অবাক হলেও, মুখে সে ভাব প্রকাশ করেনি। তার কাছে আসার হেতু জানতে চাইলে, কোনও ভণিতা না করেই ছেলেটি তাকে জানালো, সে তাকে বিয়ে করতে চায়। এত সরাসরি কোনও মেয়েকে বিয়ের কথা বলা সম্ভব কী সম্ভব না সে গবেষণা পরে করা যাবে ভেবে মেয়েটি সংক্ষেপে জানিয়ে দিল যে বিয়ে নিয়ে তার পরিবাবের মতই হবে তার মতের প্রতিফলন। অতপর ছেলেটির প্রস্থান।

শোনা যায়, মেয়েটির বাসা থেকেও নাকি বিয়ে নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। পড়াশুনায এত ভাল তাদের মেয়েটি যাতে শুধু বিত্তের মাঝে বন্দী হয়ে ঘরে বসে না থাকে সে নিয়ে বেজায় ক্যাচাল লেগেছিল।কিন্তু সুশিক্ষিত ছেলেপক্ষ মেয়ের ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে কোনও বাধা হবে না, সে রকম কথা দেয়াতে নাকি মেয়েপক্ষ বিয়েতে রাজি হয়েছিল।

অল্প কিছুদিন পর মেয়ের কাছে বাসা থেকে ফোন আসে। জরুরী তলব। সকালে বাসায় পৌছে জানতে পারে, ছেলেপক্ষ আজ সন্ধ্যায় আসবে আংটি পড়াতে। এবং তার এক মাস পর বিয়ে। শ্রাবনের কোনও এক অঝোর বৃষ্টির দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেলেটি এবং মেয়েটির বিয়ে হয়।

ছেলেপক্ষ তাদের কথা রেখেছে..মেয়েটির ক্যারিয়ারে তারা কখনোই বাধা দেয় নি। বরং প্রতি টি পদক্ষেপে পেয়েছে তাদের উত্সাহ আর অনুপ্রেরণা। পরবর্তীতে মেয়েটি ভাল চাকুরী করেছে..শোনা যায় বিদেশে গেছে পড়াশুনা করতে। প্রতিদানে মেয়েটি ও তার রূপের কমতি মুছে দিয়েছে ভালোবাসা দিয়ে, তার মেধা ও সাংসারিক গুণ দিয়ে।

খবর পেলাম ছেলেটি এবং মেয়েটির বিয়েবার্ষিকীতে তারা নাকি বিডি ব্লগের সবার কাছে দুআ প্রার্থী।