বাঙালির ইংরেজি এবং একজন অনন্ত জলিল

জিনিয়া
Published : 4 Nov 2012, 12:54 PM
Updated : 4 Nov 2012, 12:54 PM

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং একমাত্র ভাষা যা দ্বারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আমরা সবাই ভাব আদান প্রদান করে থাকি। তবে অঞ্চলভেদে আমাদের ভিন্ন ডায়ালেক্ট আছে..লালমনিরহাট-রংপুরে একরকম, তা আবার ভিন্ন চট্টগ্রামে, সেটা আবার ভিন্ন সিলেটে কিংবা বরিশালে কিংবা পুরান ঢাকায়। মোদদা কথা আমাদের ডায়ালেক্ট ভিন্ন হলেও আদি হল বাংলা। সেই বাংলা উচ্চারণেও আমাদের অনেক সমস্যা আছে। শুদ্ধ বাংলা মিডিয়ার খবর ছাড়া এখন বোধহয় কোথাও তেমন ব্যবহৃত হয় না। নাটকগুলোতেও এখন অদ্ভুত বাংলার ছড়াছড়ি। এই হল আমাদের কষ্টে অর্জিত বাংলাভাষার সাম্প্রতিক চালচিত্র।

আসুন এখন বলি আমাদের ইংরেজির অবস্থা।বাংলা মিডিয়ামে যারা পড়েছেন, তারা প্রতি বছর ইংলিশ একটা সাবজেক্ট হিসেবে পড়েছেন। তারপর যারা পড়িয়েছেন ইংরেজির পুরা ক্লাসে তাঁরা মূলত বাংলায় ক্লাস নিয়েছেন।সেখান থেকে ফ্লুয়েণ্টলি ইংরেজি শেখার আশা করা অনর্থক। যারা পরবর্তীতে ইংরেজি শিখেছেন তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় শিখেছেন। প্রথমে ভুলভাল হলেও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কেউ শুধু বলতে পারলেই হল, ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান উচ্চারণেই হতে হবে এমন কোনও কথা নেই নীতিতে বিশ্বাসী..কেউ বা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন পাশ্চাত্যের স্টাইলে।

এখন আসুন এ প্রজন্মের ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ুয়া ধনীর সন্তান এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে থাকা আমাদের বাঙালিদের কথায়। কী অদ্ভুত ভাষায় এরা কথা বলছে!!যেটাকে অনেকেই নাম দিয়েছে "বাংলিশ"। এই ভাষাই নাকি এখন স্মার্টনেস এর পরিচয় বহন করে। এরা ওয়াইফকে বলে ওয়াইফি, বিচিত্র সব ইংরেজি শব্দের আবিষ্কারক এরা।কর্মক্ষেত্রে এদের অনেক ডিমান্ড শুনেছি!!!

এখন বলি পাশ্চাত্যের ইংরেজির কথা। একি শব্দের উচ্চারণ ইংরেজি ভাষাভাষীদের মধ্যে ভিন্ন হয়। নরয়েতে ওরা J এর উচ্চারণ করে না..তাই জন (jon)কে বলে ইঅন কিংবা অস্ট্রেলিয়াতে এইচ কে বলে হেইচ। কথ্য ভাষায় খুব যে গ্রামার পুঙ্খানুপঙ্খভাবে ব্যবহৃত হয়, তা কিন্তু না। এরা বলে "ফিলিঙ্গ গুড/বেটার?" হাউ আর ইউ " কে বলে "হাউ ইজ ইট গোইং?" তো দ্রুত উচ্চারণের এই প্রশ্নের উত্তরে যদি আপনি বলেন "গোইং টু স্কুল"..তো কি আপনার এত বছরে শেখা ইংরেজি নস্যাত হয়ে যাবে?

ওদের ইংরেজি উচ্চারণ আপ্রাণ অনুকরণের চেষ্টায় আমরাও তো বাংলাদেশকে ব্যাংলা ডেশ বলি কিংবা ঢাকা কে ড্যাকা বলি। তো একজন অনন্ত জলিল যখন ঘানা কে গানা বলে তবে কেন এত মাতামাতি? আমরা কয়জন অনবরত ব্রিটিশ কিংবা এমেরিকান উচ্চারণে কথা বলি? যারা অনন্তকে নিয়ে এত হাসাহাসি করছে, খুব জানতে ইচ্ছে করছে তারাও কি ইংলিশদের মত চোস্ত উচ্চারণে ইংরেজি বলে? সবাই বলে? ওই যে বলেছি আঞ্চলিকতা, কোথাও কি তা ফুটে ওঠে না তাদের বলা ইংরেজীতে? একটি শব্দেও কি না? যদি একবারও ভুল না হয়ে থাকে তো আপনি হাসুন অনন্তের ভুল ইংরেজীতে..প্রাণ খুলে হাসুন..তাচ্ছিল্য করা শুধু আপনারই সাজে। আর যদি অন্তত একটা শব্দের উচ্চারণে মিশে থাকে বাংলার সামান্য ছোঁয়া, তবে আপনার কোনও অধিকার নেই কাউকে অপমান করার। ধিক আপনাদের।

বি,দ্র.: অনন্ত জলিল বাংলাদেশের চলচিত্রের সাম্প্রতিক সময়ের একজন সফল নায়ক।