পত্রিকার পাতা জুড়ে খবর হল "ঢাকা মাতালেন 'শিলা কি জওয়ানি"র সুনিধি চৌহান" কিংবা "ঢাকায় সুনিধি চৌহান"। আইটেম কুইনখ্যাত ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেন সুনিধি। সুনিধির আইটেম গান শোনেনি উঠতি বয়সী এমন কেউ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে কী না যথেষ্ট সন্দেহ আছে.. ২৪ ঘণ্টায় প্রচারিত ভারতীয় চ্যানেলে প্রায় সর্বক্ষণ এই আইটেম কুইনের যৌন সুড়সুড়ি মার্কা গান আমাদের ঘরে ঘরে প্রচারিত হয়। ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েরা ব্লাউজ আর লেহেঙ্গা পড়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নেচে নেচে গায়, " শিলা…শিলা কী জওয়ানি" বাবা-মার মুখে গর্ব ভরা প্রশান্তি..তাদের প্রতিভায় মুগ্ধ বাবা-মা। তরুণ তরুণীদের মুখে মুখে ফেরে "হাল কাট জওয়ানি"।
হাল আমলের ভারতীয় হিট আইটেম গানগুলোর কথা, সুর চিত্রায়ন নিঃসন্দেহে যৌনতাকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে। পাঠক, এই সব আইটেম গানের চিত্রায়ন দেখার রুচি যদি আপনার না হয়ে থাকে তো থাক, শুধু লক্ষ্য করুন গানগুলোর কথা, যেমন, 'শিলা কি জওয়ানি', 'হালকাট জওয়ানি', ক্রেজি কিয়ারে, 'দিদার দে', 'বিড়ি জ্বালাইলে', 'চোর বাজারি', 'দেশি গার্ল' '"ছোকরা জওয়ান রে", বাজে রাত কী বারা যেখানে বলা হয়েছে, ইশক জাগে তো আ যাইয় রাত কী বারা, ফোর টু কা ওয়ান গিভ মি আ কল ইন দা নাইট (জব সো জয়েগা সব, পেয়ার ভেয়ার কা বাত করেঙ্গা..)। আর এইসব গানগুলোর চিত্রায়ন যে রগরগে হবে তা গান শুনে যে কেউ আন্দাজ করে নিতে পারে। প্রশ্ন হল আইটেম গানের নামে অর্ধ উলঙ্গ ভারতীয় নায়িকাদের বিচিত্র অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শনের শারীরিক কসরত (একে আমি নাচ বলতে নারাজ) এবং এই সব নোংরা অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ গান থেকে আমাদের সমাজ কী কোনভাবে উপকৃত হচ্ছে? আর এইসব আইটেম গানয়ালীদের যারা আমাদের দেশে বাজারজাত করছে, দেশের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এইসব নষ্ট গানের সঙ্গীত শিল্পীদের এনে আমাদের উন্মাতাল করছে এতে সমাজে কী প্রভাব পড়ছে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
ঘরে ঘরে যখন ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধির দুর্গ গড়ে তোলার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক সেই সময় যৌন উত্তেজক ভারতীয় শিল্পী এসে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম মাতিয়ে যান আইটেম সং দিয়ে। পত্রিকায় প্রকাশ গতকাল শুক্রবার (৪ জানুয়ারী, ২০১৩) আর্মি স্টেডিয়ামে ভারতীয় অশ্লীল গানের আইটেম কুইন সুনিধি চৌহানের কনসার্টের জন্য লম্বা লাইন লেগেছিল। মুঠোফোন নির্মাতা নকিয়ার আয়োজনে এই কনসার্টের শিরোনাম 'সুনিধি চৌহান ইন ঢাকা। শোনা যায়, অনেক রাত পর্যন্ত এইসব যৌন উত্তেজক গান গেয়ে সুনিধি মাতিয়ে রাখেন বাংলাদেশের সঙ্গীত প্রেমীদের (!!!)। রাত নাকি যতই বাড়তে থাকে, ততই সুনিধির সুরের জাদুতে দর্শক মেতে ওঠে। এখন এই মেতে ওঠা উঠতি তরুণ তরুণীরা যদি এইসব গানের অশ্লীল ইঙ্গিতে উত্তেজিত হয়ে কোনও নোংরামিতে মেতে ওঠে তবে এর দায়ভার কিছুটা হলেও কী ওই আইটেম গানের উপর পড়ে না? মেয়েদের নাম নিয়ে গাওয়া অশ্লীল গান যেমন শিলা বা মুন্নির কারণে এই সব নামধারিণী নিরীহ মেয়েরা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন চরমভাবে হেনস্থা হয়, তখন এর দায়ভার কী সেই নোংরা আইটেম গান এবং তার গায়িকার উপর বর্তায় না?
সম্প্রতি ভারত জুড়ে যখন ধর্ষণের অপরাধীদের বিচারে উন্মাতাল, কোনও বিচারক যখন ধর্ষকের পক্ষে লড়বে না জানিয়ে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন যৌন উত্তেজক আইটেম গান এবং এই আইটেম গান গেয়ে জনপ্রিয় বনে যাওয়া আইটেম কুইন সুনিধি চৌহান কেন অপরাধী বলে গণ্য হবেন না? প্রশ্ন হতে পারে, সুনিধি তো আর গানটা লেখেন নাই বা কম্পোজ করেন নাই, ও তো শুধু গেয়েছে, শিল্পী তো গাইতেই পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি একজন শিল্পীর অবশ্যই সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে, অনেকেই তাদের আইডল মনে করে। সমাজের ক্ষতি হোক, এমন কাজে তাদের কখনোই জড়ানো উচিত নয়। তাছাড়া, আমরা যে কোনও গানের গায়ক/গায়িকাকেই বেশি মনে রাখি..এমনকি কোন থার্ড গ্রেডের আইটেমওয়ালী এর সাথে লিপসিং করল না কে করল, তা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাই না, আর ঘামাই না জন্য কয়েক লক্ষ টাকায় সুনিধিকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় আইটেম গান এর জন্য। একজন সুনিধি অবশ্যই এসব আইটেম গানকে জনপ্রিয় করছেন, আর সেই সাথে তিনি সমাজের নষ্ট কার্যকলাপেও ভূমিকা রাখছেন। পরোক্ষভাবে অবশ্যই নারী নিগ্রহের জন্য তিনি দায়ী। নারী নিগ্রহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী এইসব আইটেম নামক গানগুলোকে চিরতরে নিষিদ্ধ করার আইন অবশ্য প্রয়োজনীয়।
যেকোনো সংস্কৃতির ভাল দিকটাই গ্রহণীয়, নষ্ট দিক যা কেবল সমাজে অধপতন আনার জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, তা অবশ্যই বর্জনীয়। বাংলাদেশে এইসব নোংরা ভারতীয় চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়া অশ্লীলতাকে বন্ধ করা দরকার। বহুজাতিক বা ইভেন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীগুলো যাতে অশ্লীল শিল্পী এনে আমাদের পরিবেশ দূষণ করতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকেই সচেতন হবে, আমাদের তথ্য মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এইসব নোংরামি বন্ধে সোচ্চার হতে হবে।
******তথ্য ও ছবি সুত্র: প্রথম আলো, বাংলা নিউজ ২৪।