একজন শিক্ষক ও তার গাড়ি প্রসঙ্গ

জিনিয়া
Published : 4 June 2012, 07:25 PM
Updated : 4 June 2012, 07:25 PM

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে প্রথম দেখি আমাদের বাসায়। তখন আমি হাইস্কুল এ পড়ি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেদিন আমি তার কথা শুনছিলাম। মানুষ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!!!এত সুন্দর!!!এর আরও অনেক পরে বাংলাদেশ বেতার এবং বিশ্বসাহিত্যের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে তার কথা সামনাসামনি শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অবশ্য সেগুলোকে কথা নয়, আমার কাছে আসলে বাণী মনে হয়েছিল। নির্ভেজাল এই ব্যক্তিত্ব অনেকের মতই আমার কাছেও অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়।

আজ অনেকদিন পর স্যারকে সংবাদ শিরোনাম হতে দেখলাম। সংবাদের বিস্তারিত পড়লাম। সবার মতই আমিও মর্মাহত। বিডিনিউজ -এ স্যার এর আত্মপক্ষ সমর্থনের সংবাদও পড়লাম। পড়ে মনে হল যে, কোনও একটি মহান সংবাদপত্রের অতি জ্ঞানী সাংবাদিক ওনার বাণীর যথাযথ মর্মার্থ অনুধাবন করে সংবাদ ছেপেছেন। বুঝতে বাকি রইল না, এইসব মহান সাংবাদিকরা পদে পদে কেন আজ হেনস্থা হচ্ছেন। সংবাদ ভুল করে পরিবেশন এর জন্য কী পরিমাণ নাজেহাল হতে হয়, তা স্যার এর এই ঘটনায় অতি সহজেই অনুমান করে নেয়া যায়।

যাই হোক এবার জেনে নেই সেই সংবাদ পড়ে আমাদের ভোটে নির্বাচিত অতি অতি জনপ্রিয় জননেতাদের কী অবস্থা!! ফুলের মত পবিত্র নেতারা কান চিলে নিয়ে গেছে শুনে কোনও রকম যাচাই বাছাই না করে চিলের পিছনে ছোটা শুরু করে দিল। অবশ্য ওনারা কখনোই কিছু যাচাই করেন বলে মনে হয় না..মহান সংসদে দাড়িয়ে মুখে থুথুর ফেনা উঠিয়ে ওনারা কত কী না বলে গেলেন। দুর্নীতির সঙা জেনে ওনাদের আত্মসম্মানে এতই আঘাত লেগেছে যে বেচারাদের হার্ট অ্যাটাক হবার মত অবস্থা।

ওনাদের মধ্যে একজন জানতে চাইলেন সায়ীদ স্যার শিক্ষক হয়ে গাড়ি চড়েন কিভাবে? মাননীয় মজলুম জননেতা, প্রশ্নটা আমারও আপনাদের কাছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে আপনারা কত টাকা বেতন দেন? সেই বেতন স্কেল তো মন্ত্রনালয়ের একজন সচিবও পান। তিনি কিভাবে গাড়িতে চড়েন? আর এমপি সাহেব আপনারই বা বেতন কত? বাড়ি গাড়ি করার টাকা আপনারাই বা পান কোথা থেকে? আমরা কোথায় টাকা পাই শুনবেন? আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন একটা লম্বা সময়ের জন্য বিদেশে পড়াশুনা করতে বাইরে আসি (পাঠক, বেশিরভাগ শিক্ষকই স্কলারশিপ পায়,হতভাগা দুই একজন বাদ দিয়ে), স্কলার্শিপ এর জমানো টাকা, বিদেশে পার্ট টাইম জব, স্পাউস এর জব এর টাকা আর দেশে পূর্ণ বেতনের জমানো টাকা দিয়ে একটা ছোট ফ্লাট এবং পুরাতন একটা গাড়ি কেনার সামর্থ হয় অনেক ইয়াং বয়স এ। আর নিজের মেধা দিয়ে সৎপথে উপার্জন এর পথও আমাদের আছে। একজন শিক্ষক গাড়িতে চড়ায় জনাব এমপি আপনার গায়ে জর আসল কেন বলুন তো? গাড়ি কী শুধু আপনাদের জন্য? আর আপনাদের আজ্ঞাবহ সাগরেদদের জন্য? আপনাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তাবত জনগণ থাকুক নরকে..আর আপনারা থাকুন অট্টালিকার উপরে।

বি.দ্র: আজ ব্লগার আব্দুল মোনেম এর চমত্কার একটি লেখা পড়লাম। "চিন্তকদের কর্তব্য"। আশার কথা দেশে এখনো সায়ীদ স্যারদের মত চিন্তক আছে..কিন্তু হতাশার কথা সেই চিন্তকদের জনগণকে সঠিক দিশা দেখানোর আগেই সুপরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।