আদালতের কাঠগড়ায় সুনীল, অভিযোগকারিনী তসলিমা

জুলফিকার জুবায়ের
Published : 12 Sept 2012, 05:03 AM
Updated : 12 Sept 2012, 05:03 AM

প্রেম দৃষ্টি দিয়ে প্রবেশ করে, কিন্তু স্থান নেয় অন্তরে। অন্তর কিংবা মন কোনটাই স্পর্শ করা যায় না। তাই মনকে ছুঁবার জন্য আমরা দেহের পথ ধরে এগুই। দেহকে স্পর্শ করে মনকে ছুঁবার সুখ পেতে চাই। সুনীলের চাওয়া আর তসলিমার পাওয়াটা কি ছিল বা কি রকম ছিল – তা আমি জানি না। তবে সাম্প্রতিক কালে এটা জানি তসলিমা সুনীলকে দেহবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৃথিবীর কোন আদালত যদি সরাসরি সুনীলকে দন্তিত করে তাহলে আমি এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।

আজকাল মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়, এমন কি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিবাদগুলো আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এবং আদালতকে প্রায়শ রাষ্ট্র-পরিচালকের ভূমিকায় দেখতে পাই ! আমি জানি সুনীল তসলিমার বিবাদটাও আদালতে গড়াবে।

পৃথিবীর আদালতের সূত্রটা অনেক দীর্ঘ। পৃথিবীর আদালত চুরির দায়ে যাকে শাস্তি দেয় সেও নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দাড় করাতে পারে। সে বলে, "আমি বাঁচার তাগিদে বড়লোকের টাকা চুরি করি। পৃথিবীর সবাই চোর। চাকুরিজীবী চুরি করে ব্যবসায়ীর নিষ্ঠা, ব্যবসায়ী চুরি করে চাকুরিজীবীর সততা। বড়লোক চুরি করে দেশের টাকা, আমি চুরি করি বড়লোকের টাকা। চোর, সব চোর।"
আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার সীমানার বাইরে যেতে পারি না। নিজের ভুল বুঝে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে এমন নজির আমি এ শহরে দেখিনি। কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কি সমাজ, কি রাষ্ট্র কোথায়ও কোন পক্ষের মাঝে নমনীয়তার সুর দেখি না।

বর্তমান অবস্থায় পৃথিবীর আদালত যদি তসলিমার বিপক্ষে রায় দেয়, তাহলে আমি নিশ্চিত তসলিমা তা মেনে নেবে না এবং বিক্ষুদ্ধ হবে। সে ক্ষেত্রে সে আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। রায় সুনীলের বিপক্ষে গেলে সে ক্ষেত্রে তার জন্যও একই কথা খাটে। বিকল্প না পেলে মানুষ সাধারণত অপারগ হয়েই আদালতে যায়। আমি একটি বিকল্প ও মজবুত আদালত খুঁজে পেয়েছি। সুনীল-তসলিমার বিবাদ আমি সেই আদালতে মীমাংসা করব।

প্রথমে আদালতের কুশীলবদের পরিচয় পর্ব। তারপর বিচার কাজ।

।।আদালত পরিচিত।।
আদালতঃ বিবেকের আদালত
আদালতের ঠিকানাঃ বাংলাদেশের সবুজ হৃদয়
বিচারকঃ মানবতাবাদ
আসামিঃ সুনীল
বাদীঃ তসলিমা
আসামি পক্ষের উকিলঃ পুরুষবাদ
বাদী পক্ষের উকিলঃ নারীবাদ
অ্যামিকাস কিউরিঃ মানুষের বন্ধু দার্শনিক
জুরি বোর্ডের সদস্যবৃন্দঃ সহযোগিতার হাত, নাটের গুরু দেহ, আবুঝ মন, ঘৃণার আগুন, দু'চোখ ভরা স্বপ্ন।
সাক্ষীঃ উপস্থিত করা হয় নাই।

।।আদালতের কার্যবিবরণী।।
বিচারকঃ বাদী পক্ষ অভিযোগ উত্থাপন করুন।
বাদীর উকিল : আসামি একজন সুনাগরিক এবং হৃদয়ের কারবারী। নারী ও প্রেম নিয়ে তিনি অনবরত লিখে চলেন। বিষয়টাতে কোন অপরাধ নাই। তবে যা দৃষ্টিকটু তা হলো নারীর প্রতি তার অসদাচরণ। আসামি সুনীল ও বাদী তসলিমার মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী নারীপুরুষের পরস্পরের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধার ইঙ্গিত। এসব ঘটনা যদি আরো ঘটতে দেয়া হয় পৃথিবীতে ভালোবাসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সুখ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন আসামির আপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

বিচারকঃ অভিযোগ আমলে নেয়া হলো। এবার আমি আসামিকে আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেব। আসামি পক্ষ বক্তব্য পেশ করুন।

আসামির উকিলঃপৃথিবীতে যা ঘটে তার সব সত্য, কিন্তু মানুষ মুখে যা বলে তার সব সত্য নয়। বাদী আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিথ্যা। ভালোবাসা আমার মক্কেলের প্রধান ধর্ম। পৃথিবীর সবগুলো মানুষকে তিনি ভালোবাসেন। তসলিমার অবস্থানও তার ভালবাসার সীমানায়। ভালোবাসা সুখী করে, ঘৃণা কষ্ট দেয়। তসলিমার জীবনে এখন ঘৃণার চর্চা, তাই আমার মক্কেলের ভালোবাসার আলো তাকে উজ্জ্বল করতে পারেনি। ঘৃণার আগুনে ভালোবাসাকে পুড়াতে গিয়ে সে এখন হয়রানির স্বীকার। আমি আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা তার অভিযোগকে দৃঢ় কন্ঠে প্রত্যাখ্যান করছি। এও নিশ্চিত করছি এই শৃঙ্খলিত নারীর প্রতি আমার মক্কেলের প্রীতিবোধের অন্ত নাই এবং এই ফরিয়াদিনির বিরুদ্ধে আমার মক্কেলের ব্যক্তিগত কোন অভিযোগও নাই। তিনি পাপকে ঘৃণা করেন, পাপীকে না। তিনি শত্রুকে ভালোবেসে বন্ধু করে নেয় পৃথিবীর এই বন্ধুর পথে।

বিচারকঃ সুনীলের সমস্যা কোথায়? তিনি বই লেখক। তিনি তসলিমার মত নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ালেন কেন?
আসামির উকিলঃ যে যারে চায় সে তারে পায় না। সুনীল তার প্রথম প্রেমের প্রেমীকে পায়নি। কথাটা সত্য। এও সত্য- যদিও তারা কথা দিয়ে কথা রাখে নি তবুও পৃথিবীর কোন নারী সুনীলকে ঘৃণার করেনি। অথচ তসলিমা কেন সুনীলকে ঘৃণা করল? সমস্যাটা কার? সুনীলের না তসলিমার? সুনীল কি হৃদয়শূন্য না কি তসলিমা হৃদয়হীনা?

বিচারকঃ আপনি প্রশ্ন করার জন্য না। আপনি সত্য প্রকাশ করুন। এটাই আপনার দায়িত্ব।
আসামির উকিলঃ আন্তরিক ধন্যবাদ। যে সত্য বলতে চাই তা হলো, যুবক ছেলের যৌবনের পর হারিয়ে যায়। চিরযুবক সুনীলরা মরণশীল দেহ নিয়ে আসে অথচ ফিরে যায় অমরত্ব নিয়ে। সুনীল হৃদয়ের ভালোবাসাগুলো সব সময় গোলাপ হয়ে ফোটে। যে নারী পৃথিবীর সবগুলো পুরুষকে ফিরিয়ে দিয়েছে সে যদি সুনীলের নিঃশ্বাসের ছোঁয়া পায়, তাহলে সে অবধারিতভাবে তার ঘৃণার হেমলক বাগানে ভালোবাসার গোলাপ ফোটাবে।

সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তিটাও এক সময় পৃথিবীর ষড়যন্ত্রে সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে যায়। যারা সত্যিকারের প্রেয়সী তারা যদি কখনো ভুল বুঝে, দূরে সরে যায় অথবা অভিযোগ করে, তাহলে তারা তাদের স্বপক্ষে অকাট্য প্রমান উপস্থাপন করে। ব্যক্তিকে তারা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে, ভরা মজলিশে আক্রমন করে ভদ্রলোকদের বিব্রত করে না।

বিচারকঃ আপনি আপাতত সত্য প্রকাশে বিরতি গ্রহণ করুন। বাদী পক্ষ বলুন তসলিমা যদি এতোই শুদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে সে কেন নির্বাসিতা।
বাদীর উকিলঃ আমরা ১০০ টাকা চোরদের সাজা দেই, গায়ে হাত তুলি। কিন্তু হাজার কোটি টাকার চোরদের স্বদেশপ্রেমের মুকুট পরাই। আমরা শুধু ঘটনা দেখি ঘটনার পিছন দেখি না। অভিযোগ পুষে রাখা কষ্টের। তসলিমা তার অভিযোগুলোর অগ্রভাগে বিষ মিশিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের বুক লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মেরেছিল। কিন্তু লক্ষ্যভেদ হয়নি, এটাই তার অপরাধ। মহামান্য আদালতের প্রশ্নের জবাবে বিনীতভাবে বলব-সুনীলের মত তসলিমাও মানুষ। পৃথিবীর মানুষগুলো নির্ভুল নকশায় গড়া অথচ ভুলে ভরা। আমি তসলিমাকে বিশুদ্ধ দাবী করছি না।

সুনীলের বিরুদ্ধে যে হয়রানির অভিযোগ, তার চেয়েও বড় হয়রানি তসলিমার জীবনে আছে। এ দেশের আকাশ, বৃষ্টি আর মাটিতে তার অধিকার আছে, সে এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমাজের বিরুদ্ধাচারী হয়ে সে যে অপরাধ করেছে তার জন্য সে যে ভুখন্ডের বাসিন্দা সে ভুখন্ডেই দন্ডিত হওয়ার অধিকার রাখে। তাকে এ দেশেই কোন এক কারাগারে অথবা সংশোধনাগারে পাঠানো আইনসঙ্গত । নরকের রাজপ্রসাদের চেয়ে স্বর্গের কারাগার অনেক সুখের।

আসামির উকিলঃ মহামান্য আদালত আমি কিছু বলার ইচ্ছা পোষণ করছি।
বিচারকঃ ইচ্ছা পূরণের অনুমতি দেওয়া হলো।
আসামির উকিলঃ তসলিমা কি বুঝে না, ঘৃণা করে যুদ্ধ করে যতটুকু অধিকার আদায় করা যাবে তার চেয়ে অনেক বেশি সুখ পাওয়া যাবে ভালোবেসে জীবনের পথে সহযোদ্ধা হয়ে।
বড় লেখকরা অশালিন বিষয়গুলো লিখে শালিনতার মোড়কে। আবার সুন্দর লেখকরা অশোভন বিষয়গুলোর চারপাশে নান্দনিকতার পর্দা টাঙিয়ে লিখে। তসলিমার লেখায় আমি শালিনতার কোন মোড়ক খুঁজে পাই না। আর তার লেখায় নান্দনিকতার যে পর্দা দেখি তা অতি স্বচ্ছ। এ কারণে তসলিমাকেও অভিযুক্ত করে আসামির কাঠগড়ায় দাড় করানো যায়। এ বিষয়ে মহামান্য আদালতের সিদ্ধান্ত কামনা করছি।

বিচারকঃ তসলিমাকেও কাঠগড়ায় দাড় করানো হোক। তসলিমার উকিলের কাছে প্রশ্ন- তসলিমা এতো বুদ্ধিহীনা কেন? সে কি বুঝে না ব্যক্তির চেয়ে ধর্ম অনেক বড় ও কল্যাণমুখী? সে কেন বুঝে না তার মত ক্ষুদ্র সত্তা সত্য ধর্মের বিরুদ্ধেতো পারবেই না এমন কি মিথ্যা ধর্মের বিরুদ্ধেও পারবে না। সে কি জানে না স্বাধীন থাকলে আরো সুযোগ ছিল অন্য কোন যুদ্ধে জয়ী হবার। ধর্ম মাত্রই কল্যাণের। ধর্মের ভালো কোন দিক কখনো কেন তার চোখে ধারা পড়ে না।
তসলিমার উকিলঃ আপনি অনেকগুলো প্রশ্ন করেছেন। তার উত্তরে বলব- ধর্ম কল্যাণের জন্য, কিন্তু সবচেয়ে বড় অধর্মগুলো হয় ধর্মকে কেন্দ্র করে। আমরা পশুকে তাও মর্যাদা করি কিন্তু অন্য ধর্মের ধার্মিকদের আমরা পশুরও মর্যাদা দেই না- জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ বিধর্মিদের হত্যা করে।
বিচারকঃ কিন্তু সমাজে তসলিমাদের থাকার প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়?
তসলিমার উকিলঃ আমরা যুদ্ধ জয়ী। মহাবিপর্যয়ের পরও যে জয় আসে আমরা তা ভালো করেই জানি। গোলাপের মাঝে কীট, প্রান্তে কাটা থাকে, সমাজে তসলিমাদের মত কয়েকজন থাকলে কি এমন আসে-যায়? তসলিমাদের ক্ষমতাতো সমাজকে কিংবা ধর্মকে ধ্বংস করে ফেলার মত শক্তিশালী না। তাছাড়া মারা-মারি-কাটা-কাটিতো তসলিমারা করে না। অতি ধার্মিক, যারা ধর্ম জানে না তারাইতো মারা-মারি-কাটা-কাটিটা করে। আর তসলিমারাতো কবি। আর কবিরাতো সব সময় ভুল করে, ভুল ভাবে, ভুল লিখে। যারা ভালোবাসতে জানে তাদের কাছে সেই ভুলগুলো অনেক সুন্দর ফুল, আর যারা ঘৃণা করতে অভ্যস্ত তাদের কাছে সেই ভুলগুলো যন্ত্রণার কাটা।
বিচারকঃ সুনীলের উকিল, আপনি তসলিমার ভুলগুলোকে ফুল ভাবেন না কাটা ভাবেন।
সুনীলের উকিলঃ ভুলগুলো নিয়ে আমি ভাবি না, আমি ভাবি স্বয়ং তসলিমা একজন প্রথম শ্রেণীর ক্রিমিনাল।
বিচারকঃ আপনার দাবীর স্বপক্ষে সাক্ষী হাজির করুন।
সুনীলের উকিলঃ সাক্ষী পলাতক। তবে একজন অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য একটি প্রমানই যথেষ্ট। পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে আমি প্রমান পেশ করব।
প্রতিটি ভুল ২টি শর্তে ১টি বিজয়।
শর্ত # ১: ভুলটি দ্বিতীয়বার না করা।
শর্ত # ২: ভুলটি থেকে কিছু শেখা।
ভুলটা দ্বিতীয়বার করা হলে সেটা আসলে একটা পরাজয় এবং ক্ষমা প্রার্থণার অনুপযোগী। তসলিমার প্রধান অপরাধ সে এক ভুল বার বার করে এবং কোন বারই কোন কিছু শিখে না। তসলিমা মাত্র একজন পুরুষ দ্বারা চরিত্রহীনয়ার স্বীকার না, সে একাধিক পুরুষের প্রতারণা ও নিগ্রহের স্বীকার। তার সুখপাঠ্য বইগুলো পড়ে এটাও নিশ্চিত হওয়া যায়, সে ৪ জন বৈধ পুরুষের অঙ্কশায়িনী হবার সুযোগ পেয়েছিল। সে নিজের ভুলে বার বার অশুদ্ধ পুরুষের সঙ্গ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু কলঙ্কের দায় চাপিয়েছে আহত পুরুষ সমাজের উপর।

বিচারকঃ মানব-মানবীরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান। তাই তাদের মধ্যে বিবাদটাও সবচেয়ে বেশি। আমি এই মামলা জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে একজন অ্যামিকাস কিউরিকে তার বিজ্ঞ মতামত প্রদানের সুযোগ দেব। সম্মানিত অ্যামিকাস কিউরি আপনি আপনার মতামত প্রদান করুন।

অ্যামিকাস কিউরি : সুনীলের বিপক্ষে যত প্রশ্ন ও অভিযোগ তার চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্ন ও অভিযোগ তসলিমার বিরুদ্ধে। বিচার বসেছিল সুনীলের, অথচ তসলিমাকেও আসামি হতে হলো। পুরুষবাদ কি অনেক শক্তিশালী!

পৃথিবীতে যত কান্না তার সবটুকুই রমনীর জন্য, পৃথিবীতে যত সুখ তার সবটুকুও রমনীর জন্য। পৃথিবীটা ঘুরছে রমনীর সুডৌল দুই বুকের ঠিক মাঝখানটাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং তাদের ঘৃণা করে, অধিকার বঞ্চিত করে পৃথিবীর সুখ ও গতি ধরে রাখা যাবে না। সুনীলের আচরন পৃথিবীর গতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তার প্রতি বিবেচনাটা যেন অশুভ না হয়।
বিচারকঃ জুরিদের সাথে মত বিনিময় শেষে আমি রায় ঘোষণা করব। এর আগে দর্শক সারি থেকে কেউ একজন কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন।

কাকাতুয়াঃ সুনীল নিজের ভুল বুঝবে না, তসলিমাও নিজের ভুল বুঝবে না। প্রত্যেকেই নিজের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করতে পারার মত যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিমতি। তাছাড়া আমরা অমানুষ জাতিরা জানি, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নিজের বিশ্বাসকে ভুল ভাবার ক্ষমতা, নিজের ভ্রান্তিকে বুঝতে পারার দক্ষতা ও নিজের ভুলকে স্বীকার করতে পারার উদারতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠায়নি।
সুতরাং কে ভুল কে নির্ভুল সে সিদ্ধান্তে আসার জন্য মানুষের মস্তিষ্কটা যথেষ্ট উন্নত না। সাম্প্রতিক কালে সুনীল-তসলিমাকে নিয়ে মাতামাতি লক্ষ্য করছি। এ নিয়ে মাতামাতির কি আছে? পৃথিবীতে সবুজ আছে, আকাশে নীল আছে, আর এ দু'য়ের মাঝে সাদা সাদা মেঘ আছে। মাতামাতি করার বিষয়ের কি কোন অভাব আছে? আর আদালতেই বা আনাগোনা কেন? আদালতে কি ভদ্রলোকেরা যায়?

।।চূড়ান্ত রায়।।
স্বর্গে মানুষ পাপ করেছিল তাই দন্ড হয়েছিল পৃথিবীতে নির্বাসন। এখন এই পৃথিবীতে দন্ডভোগী মানুষদের যদি আরো সাজা দেয়া হয় তাহলে কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সুখী হবার আর কোন সুযোগ থাকবে না। যে ক্ষমার উৎপত্তি স্বর্গে, সে ক্ষমা পৃথিবীতে অবৈধ নয়। আমি প্রথমে ক্ষমা করলাম অবলা তসলিমাকে, তারপর ক্ষমা করলাম নিরীহ সুনীলকে। এ ক্ষমা তাদের জন্য ভালোবাসাবাদী হবার সর্বশেষ সুযোগ। সুনীলের আছে আকাশ, তসলিমার আছে লজ্জা। পূর্ণ আলো তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাদের হাটতে হবে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে জীবনের পথে পথে।

৯-সেপ্টেম্বর-২০১২
ধানমন্ডি, ঢাকা