রবি ঠাকুর, নতুন সুর দিয়ে যাও

জুলফিকার জুবায়ের
Published : 4 Jan 2013, 07:38 AM
Updated : 4 Jan 2013, 07:38 AM

প্রিয় রবি ঠাকুর,
তোমাকে লিখতে হবে এমনটা কখনো ভাবিনি। তবে লিখতে বসে অনেক ভালো লাগছে। লিখার আগে তোমার সংগীতকে মাধুরী ছড়িয়ে দেবার সুযোগ দিয়েছি। তোমার ১টা সংগীত শুনলে আজকাল আমি ২টা সবুজ কথা লিখতে পারি। যৌবন যখন উকিঁ দিয়েছে তার অনেক আগেই শুনেছি, জীবনে যতদিন ডাকপিয়ন থাকবে মধুও থাকবে ততদিন। ইদানীং ডাকপিয়ন দেখি না; উচ্চতাপমাত্রায় আক্রান্ত না-কি সে চাকুরী ছেড়ে চলে গেছে সেই খোঁজ আমি রাখি না। কারণ এখন আর আমার ডাকপিয়নের প্রয়োজন হয় না। পৃথিবী আগের মতই, এর আকাশ ও চাঁদ এখনও রঙ পাল্টায়নি, কিন্তু পৃথিবীর মানুষগুলোর রঙ পাল্টে গেছে। অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। পাল্টে যাবার শেষ কোন সময় নাই। বর্তমান সময়টাই পাল্টে যাবার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তাই আমি নিজেও প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করি। এ জন্য তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করব তুমিও পরিবর্তিত হও। বাউল ছেড়ে রক ধর। ঠুংরি ছেড়ে পপ গাও। তুমি দু'টি দেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা। তোমার গুরুত্ব ও দায়িত্ব অনেক। তোমার সংগীতের শুরু ও মাঝখানে নতুন ভাষা ও সুর প্রয়োজন। তাই বলি, সংগীতের স্বরলিপিগুলোর আধুনিকায়নে তুমিও এসে অংশগ্রহণ করে যাও।

আমি যখন গান শুনি তখন এর নেপথ্যে কারা কলকাঠি নাড়ে তার খোঁজ নেই না। সংগীত শিল্পীটাকে বিবেচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখি। শিল্পীর উপস্থাপনায় শিল্প খুঁজে পেয়ে ভালোবেসে ভক্ত হই। রবি, আমি নগন্য শ্রোতা হয়ে সম্মানিত এক গায়িকাকে নিয়ে বিব্রত হব এবং তোমাকে কিছু কথা লিখব।

গায়িকা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন সচেতন তরুণী। সম্প্রতি সংগীত নিয়ে করা এক নিরীক্ষায় তার অংশগ্রহণ ছিল। তিনি গেয়েছেন,"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি……………………"। জানি, তার এই গেয়ে চলায় মিথ্যা নাই, কিন্তু ভুল আছে অনেক।

জাতীয় সংগীতটা পরিবেশনের সময় গায়িকার ভাব দেখে মনে হয়েছে তার আপন বলে কেউ নাই, আর সাজ দেখে মনে হয়েছে একুল-ওকুল দুকুল হারিয়ে সদ্য তিনি দিশেহারা হয়েছেন। আমি দাবী করছি না গায়িকার দেহ সৌষ্ঠব ভালো হতে হবে অথবা প্রকাশে দৈহিক আবেদন থাকতে হবে। কিন্তু এটাতো আমি দর্শক হিসেবে আশা করতে পারি শিল্পীর নিজের উপস্থাপনটা নান্দনিক হবে বিশেষ করে তোমার সংগীত তাও আবার যুদ্ধজয়ী একটা জাতির জাতীয় সংগীত গাইবার সময়। গায়িকার চুলগুলোকে আঁচড়ে নিতে খুব বেশি অর্থকরীর কি অপচয় হত? আমারতো মনে হয় একটা ন্যায্যমূল্যের চিরুনি আর সাধারণ মানের হেয়ার ড্রায়ার হলেই হতো। সেই দক্ষতা না থাকলে বেণী বেঁধে খোপা করে রাখলেই হতো।

সবাই গায়িকার গান শুনে আর কাঁদে। কান্না শেষে বাহাবাটা দেয় গায়িকাকে। কিন্তু কেউ বুঝে না এই কান্নার উৎস শুধুমাত্র গায়িকার গায়কী না। এই কান্নার উৎস তোমার শব্দের মজবুত গাঁথুনি আর শ্রোতা-হৃদয়ের সুপ্ত দেশপ্রেম। গোলাপ বাগানে ফুটলেও সুবাস ছড়ায়, দিগন্তের শেষ সীমানায় ফুটলেও সুবাস ছড়ায়। সুবাসটা বাগান কিংবা দিগন্ত নির্ভর না, গোলাপ নির্ভর।

রবি, এই এলোকেশী তরুণী তোমার সংগীতে নতুন পঙ্ক্তি যুক্ত করেছে, তুমি কি এই গায়িকার সৃজনশীলতাকে ক্ষমা কর?

রবি, আমিতো তোমার ভাষা বুঝি তাই তোমার হৃদয়ের সুরটা শুনতে পাই। এক সময় কবিতা লেখার অপরাধে তোমার নোবেল পুরস্কারের দন্ড হয়েছিল; দন্ড তোমাকে কাঁদায়, ক্ষমা তোমাকে হাস্যোজ্জ্বল করে। আমি জানি তুমি বাংলা মায়ের এ তরুণী সন্তানকে ক্ষমা করে দিয়েছ। এও জানি তিনি যদি বাংলার কোন বনলতা অথবা লাবণ্য হয়ে এমন অসাদাচরণ করত তাহলে তুমি আবারও কলম হাতে তুলে নিতে শুধুমাত্র শেষের কবিতাটা নতুন করে লিখতে।

ইতি
জুলফিকার জুবায়ের
১৫ পৌষ ১৪১৯, ঢাকা