শিক্ষকদের দাবিটা পূরণ হলে ক্ষতিটা কোথায়

জুলফিকার জুবায়ের
Published : 31 Jan 2013, 06:47 AM
Updated : 31 Jan 2013, 06:47 AM

এখনো পর্যন্ত আমার শিক্ষার মূল ভিত্তি স্কুল জীবনের সেই শিক্ষাগুলো। যতই বেশি শিক্ষিত হয়েছি ততই বাস্তববাদিতা শিখেছি, কিভাবে চটুল কথা বলে কিংবা মনোহর কাজ করে অন্যের সম্পদটা নিজের করতে হয় তা শিখেছি, কিন্তু ভালো কিভাবে বাসতে হবে কিংবা কিভাবে পাসে এসে দাঁড়াতে হবে তা শিখিনি কোথাও।

ক্লাস ফাইভে অংক পড়ানোর দায়িত্ব ছিল রেজাউল করিম স্যারের। তিনি আমাকে অংক খারাপ শিখিয়েছিলেন তেমন অভিযোগ আমি করব না, তবে তিনি অংকের চেয়েও ভালো শিখিয়েছিলেন জীবন গতিবিদ্যার সমীকরণ।

জীবনের সমীকরণ বড় জটিল। এখানে ভালোবাসায় লাভের পরিমান খুব কম। শ্রদ্ধা করে যত সুখ প্রত্যাখান করে তার চেয়ে বেশি লাভ।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।
চাকুরি জাতীয়করণের দাবী নিয়ে আন্দোলনরত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দাবী কিন্তু খুব বেশি না। তাদের একমাত্র দাবী বাকীটা জীবন সামান্য সম্মানজনকভাবে বাঁচিয়ে নেবার উপযোগী বেতন।

দাবী পূরণের বিষয়টা অর্থনৈতিক। ফলে বুঝি এখানে গণিতের মারপ্যাঁচ আছে। প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দাবী পূরণ করতে হলে বাৎসরিক বাজেটের বড় একটি অংশ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্ধ করতে হবে। সঠিক তথ্য উপাত্ত হাতের কাছে নাই, যদি থাকত তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখা গণিত চর্চা করেই বলে দিতে পারতাম তা বছরে ৩.৫ হাজার কোটির টাকার বেশি না। এই টাকাটুকু যখন শ্রদ্ধাস্পদেষু তানভীর ভাই দালিলিক প্রমান ছাড়া তার বুক পকেটে ভরে তখন তা নগন্য চৌর্যবৃত্ত। কিন্তু যখন এই টাকাটুকু দলিল দস্তাবেস দিয়ে জীবনগুলোকে সম্মানিত ও সুখী করার জন্য চিরতরে দিয়ে দেবার দাবী উঠে তখন পন্ডিত রীতিনীতিবিদটির গায়ে অনেক লাগে।

দাবীটা পূরণ হলে ক্ষতিটা কোথায়?
আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা এই উত্তর দিতে পারে না। তবে মাধ্যমিকোত্তর শিক্ষা বলে এখানে বিনিময়ে কোন প্রাপ্তি নাই, মুনাফায় অংশিদারিত্ব নাই, ক্ষমতাসীন হওয়ায় কোন ভূমিকা নাই। যার ফলে প্রত্যাখান। তা না হলে এই শিক্ষকদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা যেত, বন্য প্রাণী ভেবে ক্যামিকেল ছিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করা যেত না, নীতিহীনদের মত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা যেত না।

দক্ষ তানভীর সাহেবদের পানীয়ের দৈনিক খরচ যেখানে ১০,০০০ টাকা সেখানে জাতি গড়ার সৎ কারিগরদের মাসিক **,০০০ টাকা বেতনের দাবী নিয়ে জীবন দিয়ে দিতে হয়। এক দিকে সম্পদের পাহাড় অন্য দিকে সম্পদের হাহাকার। কিছু বলার নাই, পৃথিবীর অর্থনীতি এমনটাই সবল।

ঘৃণা ও ভালোবাসা দু'টির চর্চাই পৃথিবীতে বৈধ। যে হৃদয়ে ভালোবাসা থাকে সে হৃদয়ে ঘৃণাও থাকে। যারা এই জাতি গড়ার কারিগরদের সুস্থ* ভাবে বেঁচে থাকার দাবীটুকুও রাখে না তাদের জন্য রইল শুধু ঘৃণা।

* ৩০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা নিয়ে ৫০০ টাকা ভাড়ার বাড়ীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায় না।

২৪-জানুয়ারি-২০১৩,ঢাকা

অপ্রাসঙ্গিক কথাঃ
রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে কিন্তু রক্তাক্ত হয় প্রজা সাধারণ। যে কোন সময় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনগণ দাড়ালে ভাবী ক্ষমতাসীনরা জনগনের সঙ্গ নিয়ে প্রেমিক হিসেবে সুবিধাভোগী হয়। তখন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জনগনের দাবীকে ভাবী ক্ষমতাসীনদের প্ররোচনায় সৃষ্ট ষড়যন্ত্র বলে প্রমান করে এবং সঙ্গত কারণে তা প্রত্যাখ্যান করে। অর্থাৎ ভাবী ক্ষমতাসীনরা পাশে এসে দাঁড়ায় বলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জনগনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতে বর্তমান এবং ভাবী কারু কিছু আসে যায় না; জনগনের বেঁচে থাকার আশাটুকু শুধু ধুসর হয়ে যায়।

৩১-জানুয়ারি-২০১৩