বর্ষপূর্তি ২০১২: ফিরে আসে বসন্তের দিন

জুলফিকার জুবায়ের
Published : 20 Feb 2013, 06:47 AM
Updated : 20 Feb 2013, 06:47 AM

সংখ্যাটা ৩
একটি মৌলিক এবং অর্থপূর্ণ সংখ্যা।
এটি এমন একটি সংখ্যা যা পূর্ববর্তী দু'টি সংখ্যার যোগফল। এবং এমনটি অন্য কোন সংখ্যার ক্ষেত্রে ঘটে না।
সবাই বলে ১ আর ১ যোগ করলে ২ হয়, আমি বলি ১ আর ১ যোগ করলে ৩ হয়।

৩-এর অনেক রহস্য। জীবন ৩, কাল ৩, জগতের রঙ ৩, পদার্থের অবস্থা ৩, আবার মাত্রাও ৩(+১)।

তবে এই বসন্তে ৩ সংখ্যাটা আমার কাছে অন্য কারণে প্রিয়। গত শুক্রবার, যে দিনটাতে বিডিনিউজ২৪ ব্লগ সাইটটির ব্লগার বন্ধুরা জড়ো হয়েছিল, সে দিনটি ছিল ফাগুনের ৩য় দিন, ফুটে থাকা গোলাপে ভ্রমর বসার দিন।

২০১১-এর ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে ব্লগটির যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দুঃখ-সুখের দু'টি বছর পার হয়ে গেছে। এ উপলক্ষ্য গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তারিখে রাজধানীর মহাখালীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে একটি বর্ষপূর্তির আয়োজন করা হয়েছিল। অনাড়ম্বর কিন্তু অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ এই মিলনমেলায় বেশ কিছু গুরত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কন্ঠে শ্রেষ্ঠ সংগীত "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সংগীত শেষে সবাই নিজেদের আংশিক পরিচয় প্রকাশ করেন এবং কেউ কেউ তাদের আদ্ভুত ব্লগ নিকগুলোর উৎস ও রহস্য উন্মোচন করেন। নন-ব্লগারদের উপস্থিতিও লক্ষণীয় ছিল। ব্লগার জাহেদ-উর-রহমানের রূপসী বাগদত্তা সম্মানিতা আন্না এবং ব্লগার জিনিয়ার সুদর্শন হাসব্যান্ড সম্মানিত জাহিদ আয়োজনটিতে উপস্থিতি থেকে মুহূর্তগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলেন। পরিচয় শেষে সবাই কৃতজ্ঞ চিত্তে ৭১ সেকেন্ড নীরব মুহূর্ত পালন করেন।

রবি ঠাকুর বলেছিলেন কুপির আগুনটা জ্বালাতে হলে আগে সলতেটা পাকিয়ে নিতে হয়। মূল আয়োজন শুরুর আগেই বুদ্ধিদীপ্ত ব্লগপোষক প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানান। এরপর ব্লগ সাইটটির সাফল্যগাঁথা নিয়ে জনপ্রিয় ব্লগার জিনিয়া কর্তৃক সংকলিত ও নির্মিত ৪০ স্লাইডের একটি প্রেজেন্টেশন দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন ব্লগার জুলফিকার জুবায়ের। স্লাইড শো শেষে ব্লগার ও নন-ব্লগারদের মধ্যে কিছুক্ষণ মত বিনিময় ও ভাবনার আদান-প্রদান চলে। তখন বাক্য বিনিময় উপভোগ্য হয়ে উঠে বন্ধুত্বের উষ্ণতায়।

এর পর শুরু হয় কৌশিক আহমেদ পরিচালিত নাগরিক সাংবাদিকতা নিয়ে ৬ মিনিটের একটি প্রামান্যচিত্র, অতি ছোট দৈর্ঘের এই চলচ্চিত্রটিতে ব্লগ সাইটটির বড় একটি চিত্র প্রকাশ পায়।

এক পর্যায়ে সাইটটির পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এসে ব্লগারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।এবং এর পর পর-ই শুরু হয়ে যায় সব চেয়ে আকর্ষণীয় পর্বঃ জন্ম-বার্ষিকী উপলক্ষে ম্যাচের কাঁঠি দিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং ছুরি দিয়ে ভ্যানিলা-কেককে দ্বিখণ্ডিতকরণ। এই পর্যায়ে পাঁচ জন ব্লগারকে সম্মাননা প্রদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন নুরুন্নাহার শিরীন, নাজনীন খলিল, আব্দুর রাজ্জাক, জাহেদ-উর-রহমান এবং নীল কন্ঠ জয়।

পূর্ণ রসনা তৃপ্তি শেষে শুরু হয় নির্বাচিত ব্লগের সংকলন নিয়ে প্রকাশিত বই 'নগর নাব্য' এর মোড়ক উন্মোচন। মোড়ক উন্মোচন করেন কলাপাতা রঙের শাড়ি পরিহিতা আমাদের সবার প্রিয় নুরুন্নাহার শিরীন আপু। শিরীন আপুকে সার্বিক সহযোগিতা করেন ব্লগার আইরিন সুলতানা।

এবং সব শেষে শুরু হয় বৈষয়িক বিষয়ে আলোচনা। বিষয়বস্তুঃ ব্লগ সাইটটির ত্রুটি বিচ্যুতি এবং পরবর্তী ভার্সনে যা কাম্য। (এ বিষয়ে পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা পোষ্ট করার ইচ্ছা রাখি) "সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেন-দেন।" না লেনদেন তখনও শেষ হয়নি। সব শেষে বিডিব্লগাররা গিয়েছিল শাহবাগে, নতুন প্রজন্মের রাজধানীতে। সেখানে তাদের সাথে মিশে গিয়েছিল শিশু-জনতাসহ প্রবীন নবীন সবাই। জয় ভাইয়ের মাথায় ছিল রবি ঠাকুরের আলো আর জনতার হাতে ছিল বজ্রকন্ঠের শপথ, "সব রাজাকারের ফাঁসি চাই"।

শেষ কথা
প্রেমিক-প্রেমিকা উতলা হয় প্রতি পূর্ণিমায়; বন্ধু-বান্ধবীরা উৎসবমুখর হয় প্রতি বসন্তে। ফাগুনের এই আয়োজনটা ছিল ভালোবাসার জন্য নির্ধারিত দিনটির ঠিক পরের দিনে। তাই ছোট এই আয়োজনটা ছিল বড় আনন্দে পূর্ণ।

'চলে যায় বসন্তের দিন' কিন্তু ফিরে আসে ভালোবাসা।
আশা করি প্রতি বসন্তে এই আয়োজনটা একবার করে ফিরে আসবে।