(ব্লগার কাজী শহীদ শওকত ভাই ব্লগের বর্ষপূর্তিতে আমার সাথে দাদার এই ছবিটি তুলেছিলেন)
প্রিয় উৎপল দাদা, কোথায় হারিয়ে গেলেন? এমন করে এতো অল্প সময়ে চলে যাবেন আমরা কেউ ভাবিনি। হয়তো আজও আমরা বিশ্বাস করতে পারি না আপনি চলে যেতে পারেন।খুব কষ্টে ছিলেন তাই না দাদা? আগুনে দগ্ধ যে হয় সেই কেবল প্রকৃত অনুভূতি বলতে পারবে। সেদিন রান্না করতে গিয়ে ফ্রাই পেনের সামান্য আঁচে বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলে ফোসকা পড়লো, আহা! কি যন্ত্রনা! আর আপনার ৩০-৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই কয়টা দিন কতো কষ্টে ছিলেন।
সেদিন ৩০ এপ্রিল রাতে ব্লগের অনেকের কাছ থেকে মেসেজ পেলাম। আপনাকে লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আইরিন আপা জানালো আপনাকে দেখতে যাওয়ার কথা। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে ছিলাম আপনাকে দেখতে যাবো বলে। এদিকে আপনার ডাক্তারি নিষেধাজ্ঞা এলো। যেন বেশি ভিজিটর না হয়। ভাবলাম ভালো থাকুন। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। তাই সময়ের অপেক্ষায় রইলাম। কিন্তু সময় এমন কঠিন কিছু শোনাবে ভাবিনি!
কি জানি! হয়তো আপনার মতো হাসি-খুশি প্রাণোচ্ছল মানুষকে পোড়া মুখে দেখা আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে ছিল বলেই হয়তো শেষ দেখাটা আর হলো না। দাদা এমন করে চলে যাবেন বলেই কি বাস্তবে দেখতে চেয়েছিলেন এই ছোট বোনটিকে? এমন করে চলে যাবেন বলেই হয়তো কাজী শহীদ শওকত ভাইকে ডেকে স্মৃতি রাখতে চেয়েছিলেন। দাদা, আপনি কেমন করে ছবি হয়ে গেলেন!
দাদা, আপনার মতো এতো আন্তরিক হয়ে কেউ লেখিকা বলবে না। ব্লগের বর্ষপূর্তির স্মৃতিগুলো আমার চিন্তাকে স্থির করে রেখেছে। দাদা আপনি কোথায় বিলীন হয়ে গেলেন? দূর আকাশে? অতল সমুদ্র তলদেশে? নাকি অন্ধকার কোনো ভুবনে? যে ভুবন নিয়ে আমাদের কারও কোন ধারনা নেই। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন আপনার ব্লগার ভাই-বোনদের চোখে কি পরিমান অসহায় অশ্রু আর বুকফাটা নিরব আহাজারি?
এইতো মার্চ মাসের কথা। দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে একটা মন খারাপ করা আপডেট দিয়েছিলাম ফেসবুকে। আপনি কতোটা আন্তরিকতা নিয়ে সান্তনা দিয়েছেন। কমেন্টে কিংবা ইনবক্সে মন ভাল করার জন্য কতো রকমের পজিটিভ কথা। আশা-ভরসার কথা। ছোট বোনকে হারানো পুতুলের শোক ভুলতে বড় ভাইটি যেমন সান্তনা দেয়। ঠিক তেমন করে। দাদা, আপনার কাছ থেকে আর কোনো কমেন্ট বা মেসেজ আসবে না? আর আপনি ব্লগ লিখবেন না?
এমন করে চলে যাবেন বলেই মায়া বাড়ালেন। দাদা দেশে এখন অনেক গরম। খুব কষ্ট হতো আপনার। তাই বুঝি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে হঠাৎ চলে গেলেন! দাদা, আমরা আপনার ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের সবার অনেক ধরনের পরিকল্পনা ছিল। আপনি মজা করে আড্ডা দেবেন।
২০ মে আমি চিকনগুনিয়া জ্বরের ধাক্কা সহ্য করতে গিয়ে ক্লান্ত। প্যারাসিটামল আমাকে ঘামে ভিজিয়ে দিচ্ছে। মাথার কাছে থাকা মোবাইলে মেসেজ এলো আইরিন আপার কাছ থেকে আপনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না প্রচন্ড কষ্টে। দাদা, ও জগত থেকে কি আমাদের দেখতে পাচ্ছেন? নাকি আমাদের আশে-পাশেই অদৃশ্য হয়ে আছেন? আমরা শুধু বুঝতে পারছি না!
যেখানেই থাকুন আপনার আত্মা শান্তিতে থাকুক!